বৃহস্পতিবার , ১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

ইতিকাফের বিধি বিধান মুফতী তাহমীদ শামী

প্রকাশিত হয়েছে-

৪৫২ নং ফতোয়া
ইতিকাফের বিধি বিধানঃ
মুফতী তাহমীদ শামী

ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ .
ইতিকাফ আরবি শব্দ৷ ইতিকাফ শব্দের অর্থ হলো- বসে থাকা, অবস্থান করা, বিশ্রাম করা, সাধনা করা ইত্যাদি। শরয়ী পরিভাষায় যে মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামাআত সহকারে নিয়মিত আদায় করা হয়, এমন মসজিদে আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে নিয়ত সহকারে অবস্থান করাকে ইতিকাফ বলে। (সূরা বাকারা ১৮৭ নং আয়াত৷ আহকামুল কুরআন ১/৫১৩, ৫১৫ পৃষ্ঠা৷

#ইতিকাফের_গুরুত্বঃ
ইতিকাফ রমযানের সাথে সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদাত৷ আর রমযানের অন্যান্য করনীয় ইবাদাত শেষে একজন রোযাদারের গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো ইতিকাফ করা৷ কেননা
রমযানের খায়র-বরকত লাভে ইতিকাফের গুরুত্ব অপরিসীম। ইতিকাফের মাধ্যমে লাইলাতুল কদর নসিব হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। আর লাইলাতুল কদরের আশায় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রথমে রমযানের প্রথম দশদিন ইতিকাফ করেছেন৷ আতপর দ্বিতীয় দশদিন ইতিকাফ করেছেন৷ অতপর স্বপ্নে তাকে জানানো হলো যে, লাইলাতুল কদর শেষ দশকে রয়েছে৷ অতপর তিনি শেষ দশকে ইতিকাফ করার ব্যপারে বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। শুধু তাই নয়! নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে প্রতি বৎসর ইতিকাফ করেতেন এবং তাঁর পবিত্র স্ত্রীগণও ইতিকাফ করতেন এবং তাঁর সাহাবীরাও ইতিকাফ করতেন৷ আর উম্মতকে তিনি ইতিকাফ করার জন্য বিশেষভাবে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করেছেন। যেমন হাদীস শরীফে বর্নিত হয়েছে-
ﻋَﻦْ ﺃُﺑَﻲِّ ﺑْﻦِ ﻛَﻌْﺐٍ ﺃَﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﻌْﺘَﻜِﻒُ ﺍﻟْﻌَﺸْﺮَ ﺍﻟْﺄَﻭَﺍﺧِﺮَ ﻣِﻦْ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﻓَﺴَﺎﻓَﺮَ ﻋَﺎﻣًﺎ ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻣِﻦْ ﺍﻟْﻌَﺎﻡِ ﺍﻟْﻤُﻘْﺒِﻞِ ﺍﻋْﺘَﻜَﻒَ ﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ ﻳَﻮْﻣًﺎ .
হযরত উবাই বিন কা’ব রাযিঃ থেকে বর্ণিত৷ হযরত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি বছর রমাদানের শেষ দশ দিন ইতিকাফ করতেন। তবে তিনি কোন এক বছর রমযানে সফরে অতিবাহিত করেন। এরপর পরবর্তী বছর তিনি বিশ দিন ই‘তিকাফ করেন। সনদ সহীহ৷ (সুনানে ইবনে মাজাহ ১৭৭০ হাদীস৷ সুনানে আবূ দাউদ ২৪৬৩ হাদীস৷ সুনানে তিরমিযী ৮০৩ হাদীস৷ সহীহ ইবনে খুযায়মাহ ২২২৭ হাদীস৷ মুসনাদে আহমাদ ২০৭৭০ হাদীস৷ মুসতাদারাকে হাকীম ১৬০১ হাদীস৷ মিশকাতুল মাসাবীহ ২১০২ হাদীস৷)

হাদীস শরীফে আরও বর্নিত হয়েছে-
ﻭَﻋَﻦْ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ : ﺃَﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰَّ ﷺ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﻌْﺘَﻜِﻒُ ﺍﻟْﻌَﺸْﺮَ ﺍﻟْﺄَﻭَﺍﺧِﺮَ ﻣِﻦْ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﺣَﺘّٰﻰ ﺗَﻮَﻓَّﺎﻩُ ﺍﻟﻠّٰﻪُ ﺛُﻢَّ ﺍﻋْﺘَﻜَﻒَ ﺃَﺯْﻭَﺍﺟُﻪ ﻣِﻦْ ﺑَﻌْﺪِﻩ .
উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়িশা রাযিঃ থেকে বর্ণিত৷ তিনি বলেনঃ হযরত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সবসময়ই রমযান মাসের শেষ দশদিন ইতিকাফ করেছেন৷ তাঁর ওফাতের পর তাঁর স্ত্রীগণও ইতিকাফ করেছেন। সনদ সহীহ৷ (সহীহুল বুখারী ২০২৬ হাদীস৷ সহীহু মুসলিম ১১৭২ হাদীস৷ সুনানে আবূ দাঊদ ২৪৬২ হাদীস৷ সুনানে তিরমিযী ৭৯০ হাদীস৷ মুসনাদে আহমাদ ২৪৬১৩ হাদীস৷ মিশকাতুল মাসাবীহ ২০৯৭ হাদীস৷)

হাদীস শরীফে আরও বর্নিত হয়েছে-
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﻗَﺎﻝَ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﻌْﺮِﺽُ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻨّﺒِﻲِّ ﺻَﻠّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠّﻢَ ﺍﻟﻘُﺮْﺁﻥَ ﻛُﻞّ ﻋَﺎﻡٍ ﻣَﺮّﺓً، ﻓَﻌَﺮَﺽَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻣَﺮّﺗَﻴْﻦِ ﻓِﻲ ﺍﻟﻌَﺎﻡِ ﺍﻟّﺬِﻱ ﻗُﺒِﺾَ ﻓِﻴﻪِ، ﻭَﻛَﺎﻥَ ﻳَﻌْﺘَﻜِﻒُ ﻛُﻞّ ﻋَﺎﻡٍ ﻋَﺸْﺮًﺍ، ﻓَﺎﻋْﺘَﻜَﻒَ ﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ ﻓِﻲ ﺍﻟﻌَﺎﻡِ ﺍﻟّﺬِﻱ ﻗُﺒِﺾَ ﻓِﻴﻪِ .
হযরত আবু হুরায়রা রাযিঃ বলেছেনঃ হযরত জিবরীল প্রতি বছর হযরত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে একবার কুরআন শোনাতেন। কিন্তু যে বছর তাঁর ওফাত হয় সে বছর দুই বার শোনালেন। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি বছর দশ দিন ইতিকাফ করতেন। কিন্তু ইন্তেকালের বছর তিনি বিশ দিন ইতিকাফ করেছেন। সনদ সহীহ৷ (সহীহুল বুখারী ৪৯৯৮, ২০৪৪ হাদীস৷ সুনানে ইবনে মাজাহ ১৭৬৯ হাদীস৷ সুনানে আবূ দাউদ ২৪৬৬ হাদীস৷ সুনানে তিরমিযী ৭৯০ হাদীস৷ সুনানে দারেমী ১৭৭৯ হাদীস৷ মুসনাদে আহমাদ ৭৭২৬ হাদীস৷)

১৷ মাসআলাঃ
ইতিকাফের শর্তসমূহঃ
১৷ মুসলিম হওয়া৷
২৷ বালিগ বা বালিগা হওয়া৷
৩৷ সুস্থ-মস্তিস্কের অধিকারী হওয়া৷
৪৷ ইতিকাফের নিয়ত করা৷
৫৷ মাসজিদে ইতিকাফ করা৷
৬৷ মাসজিদে নির্ধারিত স্থানে ইতিকাফ করা৷
৭৷ রোযা অবস্থায় ইতিকাফ করা৷
(আহকামুল কুরআন ১/৫২২ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে আলমগীরী ১/৫১০,৫১১ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে ইউনুসিয়া ২/৪৫৭ পৃষ্ঠা৷ আশরাফুল হিদায়া ২/২৮৬ পৃষ্ঠা৷ কানযুদ দাকায়িক ১/২৮৭ পৃষ্ঠা৷ আহকামুস সিয়াম ৩৫ পৃষ্ঠা৷)

২৷ মাসআলাঃ
ইতিকাফের স্থানঃ
ইতিকাফের জন্য সর্বোত্তম স্থান হলো-মাসজিদুল হারাম৷ তারপর মাসজিদুন নববী৷ তারপর মাসজিদুল আকসা৷ তারপর মাসজিদুল জুমুআ৷ তারপর মাসজিদে পাঞ্জেগানা৷ আর মহিলাদের জন্য ইতিকাফের সর্বোত্তম স্থান হলো- ঘরের অন্দর মহল৷ এছাড়া অন্য কোথাও ইতিকাফ সহীহ হবেনা৷ (আহকামুল কুরআন ১/৫১৩, ৫১৫ পৃষ্ঠা৷ আহকামুল হাদীস ৬৫২ পৃষ্ঠা৷ আহকামুস সিয়াম ৩৬ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে আলমগীরী ১/৫১০ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে রহিমীয়া ৫/২০৯ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে ইউনুসিয়া ২/৪৫৯ পৃষ্ঠা৷ বেহেশতী গাওহার ১১/১৪৬ পৃষ্ঠা৷ আশরাফুল হিদায়া ২/২৮৮ পৃষ্ঠা৷ ইসলামী ফিকাহ ২/২১৩ পৃষ্ঠা৷)

৩৷ মাসআলাঃ
পুরুষের ইতিকাফ সহীহ হওয়ার জন্য শরয়ী মসজিদ হওয়া জরুরী। যেমন কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে, আর যতক্ষণ তোমরা ইতিকাফ অবস্থায় মাসজিদে অবস্থান কর ততক্ষন পর্যন্ত স্ত্রীদের সাথে মিলিত হয়ো না৷ -(সূরা বাকারা ১৮৭ আয়াত৷) ইমাম কুরতুবী রাহিঃ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেনঃ উক্ত আয়াতের আলোকে সকল ইমাম এ বিষয়ে একমত যে, মসজিদ ছাড়া অন্যস্থানে ইতিকাফ সহীহ হবে না। তাই নামায-ঘরে বা ইবাদত খানায় কিংবা অন্য কোন স্থানে ইতিকাফ সহীহ হবে না। অনুরুপভাবে মিল ফেক্টরীর ওয়াকফবিহীন মাসজিদেও ইতিকাফ সহীহ হবেনা৷ যদিও ইমাম মুয়াযযিন নির্ধারিত থাকে৷ (সূরা বাকারা ১৮৭ আয়াত৷ তাফসীরে কুরতুবী ২/২২২ পৃষ্ঠা৷ আহকামুল কুরআন ১/৫১২ পৃষ্ঠা৷ আহকামুল আওকাফ ৭২ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে শামী ২/৪৪০ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে তাতারখানিয়া ৩/৪৪২ পৃষ্ঠা৷ খুলাসাতুল ফতোয়া ১/২৬৭ পৃষ্ঠা৷ বাদায়েউস সানায়ে ২/২৮০ পৃষ্ঠা৷)

৪৷ মাসআলাঃ
ইতিকাফ তিন প্রকারঃ
১৷ ওয়াজিব ইতিকাফ৷ তথা-মান্নতের ইতিকাফ৷
২৷ সুন্নত ইতিকাফ৷ তথা-রমযান মাসের শেষ দশ দিনের ইতিকাফ৷
৩৷ নফল ইতিকাফ৷ তথা-যে কোন দিন বা যে কোন সময়ের ইতিকাফ৷ তবে নফল ইতিকাফ এক মুহুর্তও হতে পারে৷ (সুনানে ইবনে মাজাহ ১৭৭২, ১৭৬৯ হাদীস৷ নাসরুল বারী শরহে বুখারী ৫/৬৪৪ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে আলমগীরী ১/৫১০ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে জামেয়া ৫/২১৭ পৃষ্ঠা৷ বেহেশতী গাওহার ১১/১৪৭ পৃষ্ঠা৷ আহকামুস সিয়াম ৩৫ পৃষ্ঠা৷)

৫৷ মাসআলাঃ
সুন্নত ইতিকাফঃ
রমযান মাসের শেষ দশদিন মহল্লার মাসজিদে ইতিকাফ করা সুন্নতে মুআক্কাদাহ আলাল কিফায়া৷ অর্থাৎ মহল্লার দু’একজন লোক ইতিকাফ করলেই সকলের পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে৷ আর যদি মহল্লার একজন লোকও ইতিকাফ না করে, তবে মহল্লার সকলেই সুন্নাত তরকের গুনাহগার হবে৷ (সহীহুল বুখারী ২০২৬ হাদীস৷ ফতোয়ায়ে শামী ৩/৪৩০ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে জামেয়া ৩/৩০২ পৃষ্ঠা৷ আশরাফুল হিদায়া ২/২৮৫ পৃষ্ঠা৷ আহকামুস সিয়াম ৩৬ পৃষ্ঠা৷)

৬৷ মাসআলাঃ
অনেক এলাকায় এরুপ প্রচলন রয়েছে যে, শুধু রমযানের শেষ তিনদিন ইতিকাফ করে৷ এতে সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ ইতিকাফ আদায় হবেনা বরং তা নফল ইতিকাফ হিসেবে গন্য হবে৷ আর উক্ত অবস্থায় সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ তরক করার কারনে মহল্লার সকলেই গুনাহগার হবে৷ (সহীহুল বুখারী ২০২৬ হাদীস৷ মুসনাদে আহমাদ ৭৭২৬ হাদীস৷ ইমদাদুল ফতোয়া ২/১৫৪ পৃষ্ঠা৷ আহকামুস সিয়াম ৩৬ পৃষ্ঠা৷ মাসায়েলে ইতিকাফ ২৬ পৃষ্ঠা৷)

৭৷ মাসআলাঃ
রমযান মাসের বিশ রোযার দিন সূর্যাস্তের পূর্ব থেকে ইতিকাফের নির্ধারিত স্থানে অবস্থান করা এবং ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখা প্রমাণিত হওয়া পর্যন্ত ইতিকাফে বহাল থাকা জরুরী৷ তবে সূর্যাস্তের পুর্বেই যদি ঈদের চাঁদ দেখা যায়, তাহলে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ইতিকাফে অবস্থান করা জরুরী৷ (নাসরুল বারী শরহে বুখারী ৫/৬৪৩ পৃষ্ঠা৷ আনওয়ারুল মিশকাত ৩/৩৭২ পৃষ্ঠা৷ ইসলামী ফিকাহ ২/২১৪ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়া ও মাসায়িল ৪/৬৬ পৃষ্ঠা৷ আহকামুস সিয়াম ৩৬ পৃষ্ঠা৷)

৮৷ মাসআলাঃ
অনেক এলাকায় ইতিকাফ করার জন্য লোক খুঁজে পাওয়া যায়না৷ তখন অন্য এলাকা থেকে লোক এনে ইতিকাফে বসায়৷ এতে ইতিকাফ আদায় হয়ে যাবে৷ কিন্তু এরুপ করা উচিত নয়৷ (ফতোয়ায়ে দারুল উলুম ৬/৫১২ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে শামী ২/৪৪২ পৃষ্ঠা৷ খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৬৭ পৃষ্ঠা৷ ইলাউস সুনান ১৬/১৭২ পৃষ্ঠা৷ মাসায়েলে ইতিকাফ ২৪-২৫ পৃষ্ঠা৷)

৯৷ মাসআলাঃ
বিনিময় দিয়ে বা বিনিময় নিয়ে ইতিকাফ করা বা করানো সম্পূর্ণ নাজায়েয৷ কেননা ইতিকাফ একটি ইবাদাত৷ আর ইবাদাতের বিনিময় দেয়া-নেয়া জায়েয নেই৷ তবে ইতিকাফকারীকে হাদিয়া দেয়া অবশ্যই জায়েয হবে৷ (ফতোয়ায়ে কাসেমীয়া ১/৩২৬ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে শামী ২/১৯৯ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে তাতার খানিয়া ২/৩২৫ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে রহমানিয়া ১/৪৫৮ পৃষ্ঠা৷ আহকামুস সিয়াম ৩৬ পৃষ্ঠা৷)

১০৷ মাসআলাঃ
ইতিকাফকারীর করণীয়ঃ
১৷ অধিক পরিমাণে কুরআনুল কারীম তিলাওয়াত করা৷
২৷ অধিক পরিমাণে দরুদ পাঠ করা৷
৩৷ অধিক পরিমাণে তাসবীহ তাহলীল পাঠ করা৷
৪৷ অধিক পরিমাণে তাওবা ইস্তিফফার করা৷
৫৷ অধিক পরিমানে নফল নামায আদায় করা৷
৬৷ সর্বদা আল্লাহ তায়ালার ধ্যানে মগ্ন থাকা৷
৭৷ ইলমে দ্বীন চর্চা করা৷
৮৷ দ্বীনি কিতাবাদী মুতায়ালা করা৷
৯৷ দ্বীনি কিতাবাদী রচনা করা৷
১০৷ ফতোয়া ও মাসআলা মাসায়িল রিসার্চ করা৷
(নাসরুল বারী শরহে বুখারী ৫/৬৪৩ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে আলমগীরী ১/৫১২ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়া ও মাসায়িল ৪/৬৭ পৃষ্ঠা৷ আহকামুস সিয়াম ৩৭ পৃষ্ঠা৷ আহকামে রমযানুল মোবারক ১০ পৃষ্ঠা৷)

১১৷ মাসআলাঃ
ইতিকাফ ভঙ্গের কারণসমূহঃ
১৷ ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় স্ত্রী-সহবাস করা৷
২৷ খাহেশাতসহ স্বামী-স্ত্রী আদর-সোহাগ করা৷
৩৷ হস্তমৈথুন করে বির্যপাত করা৷
৪৷ শরয়ী প্রয়োজন ব্যতীত রোযা ভঙ্গ করা৷
৫৷ শরয়ী প্রয়োজন ব্যতীত মাসজিদ থেকে বের হওয়া৷
৬৷ ভুলক্রমে মাসজিদ থেকে বের হওয়া৷
৭৷ জোরপুর্বক কেউ মাসজিদ থেকে বের করে দিলে৷
৮৷ চিকিৎসার জন্য মাসজিদ থেকে বের হলে৷
৯৷ রোগীর সেবার জন্য মাসজিদ থেকে বের হলে৷
১০৷ জানাযা পড়া বা পড়ানোর জন্য মাসজিদ থেকে বের হলে৷
১১৷ ফরয নয় এমন গোসলের জন্য মাসজিদ থেকে বের হলে৷
১২৷ জিহাদের উদ্দেশ্যে মাসজিদ থেকে বের হলে৷
১৩৷ মহিলাদের হায়েয বা নেফাস হলে৷ (সূরা বাকারা ১৮৭ আয়াত৷ সুনানে আবূ দাঊদ ২৪৭৩ হাদীস৷ সুনানুল কুবরা-বায়হাকী ৮৫৯৪ হাদীস৷ মিশকাতুল মাসাবীহ ২০০৪ হাদীস৷ আহকামুল কুরআন ১/৫২০ পৃষ্ঠা৷ আহকামুস সিয়াম ৩৭ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে আলমগীরী ১/৫১২-৫১৩ পৃষ্ঠা৷)

১২৷ মাসআলাঃ
ইতিকাফকারীর গোসলের হুকুমঃ
ইতিকাফ অবস্থায় ফরয গোসল ব্যতীত অন্য গোসলের জন্য মাসজিদের বাহিরে গেলে ইতিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে৷ এমনকি জুমার গোসলের জন্যও৷ কেননা হযরত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইতিকাফ অবস্থায় জুমার গোসল করেন নি৷ তবে হাঁ যদি অতিব প্রয়োজন হয় যার কারনে শারীরিক অস্থিরতা অনুভব হয় এবং ইবাদতে বিঘ্নতা ঘটে, তাহলে গোসল করতে পারবে৷ তবে এ ক্ষেত্রে করনীয় হলো অজুর জন্য বের হয়ে অজুর সমপরিমাণ সময়ে গোসল করে নেওয়া৷ কিন্তু গায়ে সাবান লাগালে ও কাপড় ধুয়ে সময় নষ্ট করলে ইতিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে৷ (বেহেশতী জেওর ৩/২৭২ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে উসমানী ২/১৯৫ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে মাদানিয়া ১/৩১৮ পৃষ্ঠা৷ আহসানুল ফতোয়া ৪/৫০৫ পৃষ্ঠা৷ আহকামুল হাদীস ৬৫৪ পৃষ্ঠা৷ মাসায়িলে ইতিকাফ ৪৬ পৃষ্ঠা৷)

১৩৷ মাসআলাঃ
ইতিকাফকারী যেসব কারনে মাসজিদ থেকে বের হতে পারেঃ
১৷ পস্রাব পায়খানা করার জন্য৷
২৷ অজু করার জন্য৷
৩৷ ফরয গোসল করার জন্য৷
৩৷ খানা আনার জন্য৷ যদি কোন লোক না থাকে৷
৪৷ আযান দেওয়ার জন্য৷ যদি তিনি মুয়াযযিন হয়৷
৫৷ জুমার নামায আদায় করার জন্য৷ যদি উক্ত মাসজিদে জুমা না হয়৷
৬৷ জান-মালের নিরাপত্তার জন্য৷
৭৷ মাসজিদ ভেঙ্গে গেলে অন্য মাসজিদে যাওয়ার জন্য৷
(আহকামুল কুরআন ১/৫১৮ পৃষ্ঠা৷ আহকামুল হাদীস ৬৫৩ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে শামী ২/৪৪৫ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে ইউনুসিয়া ২/৪৬০ পৃষ্ঠা৷ কিতাবুল ফিকাহ ১/৯৫৩ পৃষ্ঠা৷ মাজমাউল আনহুর ১/২৫৬ পৃষ্ঠা৷)

১৪৷ মাসআলাঃ
ইতিকাফের কাযাঃ
রমযানের শেষ দশদিন ইতিকাফ করা অবস্থায় যদি কোন দিনের ইতিকাফ ভঙ্গ হয়ে যায়, তবে শুধু সে দিনের ইতিকাফ কাযা করা ওয়াজিব হবে৷ আর তা সামনের রমযানেও কাযা করতে পারবে। তবে রমযানের বাইরে ইতিকাফটি কাযা করতে চাইলে সূর্যাস্তের পর থেকে পরের দিন নফল রোযাসহ সূর্যাস্ত পর্যন্ত মসজিদে ইতিকাফ করতে হবে। উল্লেখ- শুধু ওয়াজিব ও সুন্নত ইতিকাফের কাযা করতে হয়৷ নফল ইতিকাফের কোন কাযা নেই৷ (সহীহুল বুখারী ২০৪১ হাদীস৷ মুসনাদে ইমাম আবু হানিফা ২১৯ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে শামী ৩/৪৪৪ পৃষ্ঠা৷ বাদায়েউস সানায়ে ২/২৮২ পৃষ্ঠা৷ ফাতহুল কাদীর ২/৩০৮ পৃষ্ঠা৷)

১৫৷ মাসআলাঃ
মান্নতের ইতিকাফঃ
কেহ যদি মান্নত করে যে, মাসজিদুল হারামে বা মাসজিদুন নববীতে কিংবা মাসজিদুল আকসায় অথবা অন্য কোন মাসজিদে ইতিকাফ করবে, তবে যে কোন মাসজিদে ইতিকাফ করলেই মান্নত পুরা হয়ে যাবে৷ (সহীহুল বুখারী ২০৩২ হাদীস৷ সুনানে আবু দাউদ ২৪৭৪ হাদীস৷ মুসনাদে ইমাম আবু হানিফা ২১৯ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে আলমগীরী ১/৫১৬ পৃষ্ঠা৷ আশরাফুল হিদায়া ২/২৮৬ পৃষ্ঠা৷)

১৬৷ মাসআলাঃ
কেহ যদি একমাস ইতিকাফ করার মান্নত করে মৃত্যু বরন করে, তবে প্রতি দিনের ইতিকাফের জন্য সদকাতুল ফিতর পরিমাণ খাদ্য বা মূল্য মিসকিনকে দেয়া ওয়াজিব হবে৷ তবে কেহ যদি অসুস্থ অবস্থায় মান্নত করে যে, যদি সুস্থ হই তবে একমাস ইতিকাফ করবো, কিন্তু সুস্থ হওয়ার পুর্বেই সে মারা গেল, তাহলে কিছুই করতে হবেনা৷ আর কারো জিম্মায় ইতিকাফের কাযা থাকলে মৃত্যুর পুর্বেই অসিয়ত করে যাওয়া ওয়াজিব৷ (সহীহুল বুখারী ২০৪৩ হাদীস৷ ফতোয়ায়ে আলমগীরী ১/৫১৬-৫১৭ পৃষ্ঠা৷ আহকামুস সিয়াম ৪৪ পৃষ্ঠা৷ আহকামুল কুরআন ১/৫১৭ পৃষ্ঠা৷)
ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺍﻋﻠﻢ ﺑﺎﻟﺼﻮﺍﺏ

সৌজন্যেঃ
আত তাহমীদ ইসলামীক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ৷
১৯ রমযান ১৪৪৩ হিজরী৷
২১/৪/২০২২ ঈসায়ী৷