কিন্ডারগার্টেনে বইয়ের চাপে কোমলমতি শিশুরাঃ নুর আহমেদ সিদ্দিকী।। উখিয়া ভয়েস২৪ডটকম

 

আলমগীর ইসলামাবাদী
(চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি)

 

কিন্ডারগার্টেন শিশুদের প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয় বা বিদ্যালয় পূর্ব উপযোগী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশেষ। কিন্ডারগার্টেন শব্দটি জার্মান, যার অর্থ হচ্ছে শিশুদের বাগান।কিন্ডারগার্টেন শিশু শিক্ষানুরাগী ও দার্শনিক ফ্রেডরিখ ফ্রোয়েবল প্রবর্তন করেন।তিনি ১৮৩৭ সালে ব্যাড ব্ল্যাংকেনবার্গে শিশুদের বাড়ি থেকে বিদ্যালয় গমন এবং খেলা ও প্রাতিষ্ঠানিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণের ধারণাকে কেন্দ্র করে এই শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন।তাঁর উদ্দেশ্য ছিল শিশুরা উপযুক্ত রক্ষাণাবেক্ষনের মাধ্যমে প্রতিপালিত হবে এবং শিশুদের বাগান’ হিসেবে কিন্ডারগার্টেনে বাগিচায় রোপিত চারাগাছের ন্যায় পরিচর্যা পাবে।শিশুরা কিন্ডারগার্টেনে উপস্থিত হয়ে পারস্পরিক যোগাযোগ রক্ষা করাসহ একে অপরের সাথে খেলাধূলা করবে এবং অন্যের সাথে স্বাচ্ছন্দ্যে উপযুক্ত কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করবে।ফ্রেডরিক ফ্রোয়েবল কিন্ডারগার্টেন কে শিশুদের মানসিক বিকাশের জন্য প্রবর্তন করেছে।খেলাধূলার পাশাপাশি কোমলমতি শিশুরা খেলার ছলে কিছু শিখবে।তাদের উপর জোরপূর্বক বই চাপিয়ে দেওয়াকেও তিনি সমর্থন দেননি।অথচ বাংলাদেশে কিন্ডারগার্টেনে একজন শিশুকে বইয়ের চাপে রাখে।যেখানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে তিনটি করে বই সেখানে কিন্ডারগার্টেনে শিশু শ্রেণি তথা প্রাক প্রাথমিকে পাঁচটি বই।প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে ইচ্ছামত সাত- আটটি বই চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।

যেখানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে বইয়ের সংখ্যা ছয়টি সেখানে একজন কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষার্থীকে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে ১০-১২ টি বইয়ের বোঝা।এটা কিন্ডারগার্টেনের শিশুদের উপর এক প্রকার জুলুম বলা চলে।৫০ কেজি ওজনের পণ্য বহন করতে পারে এমন লোক কে ১০০ কেজি ওজনের পণ্য বহন করতে দিলে যেমন পারবেনা ঠিক তেমনি কোমলমতি শিশুরা যেখানে ৩ টি বইয়ের চাপ গ্রহণের ক্ষমতা রাখে তাদের ৬-১০ টি বই চাপিয়ে দিলে পারার কথা নয়।বাংলাদেশে সারা দেশে অলিতে গলিতে কিন্ডারগার্টেন। বর্তমানে ৭০ হাজার কিন্ডারগার্টেন অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে।অবৈধভাবে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে গড়ে উঠছে অধিকাংশ কিন্ডারগার্টেন। ব্যাঙের ছাতার মত পাড়ায় মহল্লায় সরকারী নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করে গড়ে উঠঠে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।সারা বছর কোমলতি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার মধ্যে রাখে।প্রতি মাসে টিউটোরিয়াল পরীক্ষা,প্রতি তিন মাস পর পর সেমিস্টার এবং সাময়িক পরীক্ষা নেয় এসব কিন্ডারগার্টেন গুলো।প্রত্যেক টিউটরিয়াল পরীক্ষা,সেমিস্টার এবং সাময়িক পররীক্ষার জন্য আলাদা অালাদা ফি নেওয়া হয়।এসব পরীক্ষার কারণে শিক্ষার্থীরা প্রচন্ড মানসিক চাপে থাকে। ঘন ঘন পরীক্ষার ফি আদায় করতে অধিকাংশ অভিভাবক অার্থিক সংকটে পড়ে।

প্রতি মাসে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মোটা অংকের বেতন নিলেও কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক শিক্ষিকাদের সর্বোচ্চ বেতন দেওয়া হয় ছয়- সাত হাজার টাকা।একজন অনার্স মাস্টার্সে অধয়নরত শিক্ষার্থীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিলে তাকে দুই হাজার টাকা সম্মানি দেওয়া হয়।অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় এস এস সি পাস করে কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পায়।কিন্ডারগার্টেন কর্তৃপক্ষ বেতন কম দেওয়ার নিমিত্তে এস এস সি পাস করা শিক্ষার্থীকে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে দেখা যায়।শিক্ষকদের সম্মানি কম দেওয়ার কারণে ঘন ঘন শিক্ষক পরিবর্তন হয়।আর এই পরির্বতন শিক্ষার্থীদের মাঝে বিরূপ প্রভাব ফেলে।যে হারে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মাসিক বেতন আদায় করে সে অনুসারে শিক্ষকদের সম্মানি বা বেতন দেওয়া হয় না।শিক্ষক নিয়োগ,শিক্ষাক্রম বা সিলেবাস কেমন হওয়া চাই তা নিয়ে সররকারের ভাবা উচিত।কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উপর এভাবে বই আর পরীক্ষার বোঝা চাপিয়ে দেওয়া এক প্রকার শিশু নির্যাতন।নগরে ইসলামী কিন্ডারগার্টেন যে গুলো গড়ে ওঠেছে সেগুলোরও একই দশা।শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক কিন্ডারগার্টেনের এসব অনিয়ম ও অসঙ্গতির বিরুদ্ধে যথাযথ পদেক্ষেপ নেওয়া সময়ের দাবি।

লেখকঃনুর আহমেদ সিদ্দিকী
০৮/০৯/২০২০

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *