মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে কথিত গণকমিশনের শ্বেতপত্রটিকে বর্তমান স্থিতিশীল পরিবেশকে বিনষ্ট করে আলেম-উলামা ও সরকারকে মুখোমুখি করার একটি হীন অপপ্রয়াস বলে মনে করেন দেশের তরুণ আলেমরা।
তারা বলছেন, কথিত গণ কমিশনের এই শ্বেতপত্র প্রকাশ সংবিধানবিরোধী। নাগরিকের মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন এবং স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে উল্লেখিত মানবিক মর্যাদা নীতির প্রতি অশ্রদ্ধা। এই কথিত কমিশনের তদন্ত ও শ্বেতপত্রের নৈতিক ও আইনগত কোন ভিত্তি নাই। বরং এটি সংবিধান, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তথা মানবিক মর্যাদার বিরুদ্ধে একটি পরিকল্পিত অপরাধ।
শুক্রবার (২০ মে ) গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে দেশের তরুণ চিন্তক ও গবেষক আলেমদের পক্ষ থেকে এসব কথা বলা হয়।
বিবৃতিদাতা চিন্তক আলেমরা হলেন- বাংলাদেশ কওমী মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের সহ সভাপতি মাওলানা মুসলেহ উদ্দীন গহরপুরী, ইকরা বাংলাদেশের প্রিন্সিপাল মাওলানা সদরুদ্দীন মাকনুন, জাতীয় ইমাম সমাজের মহাসচিব ও চকবাজার শাহী মসজিদের খতিব মুফতি মিনহাজ উদ্দিন, জামিয়া সাঈদিয়া কারীমিয়া ঢাকার প্রিন্সিপাল মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, আঞ্জুমানে দাওয়াতে ইসলাহ’র দায়িত্বশীল ড. মাওলানা কামরুল ইসলাম ভূইঁঞা, গুলিস্তান পীর ইয়ামেনী জামে মসজিদের খতিব মুফতি ইমরানুল বারী সিরাজী, গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসার মুহাদ্দিস মুফতি মাকসুদুল হক, জনপ্রিয় ইসলামি লেখক সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর, এহসান সিরাজ, চট্টগ্রাম দারুল মাআরিফের শিক্ষক মাওলানা মাহমুদ মুজিব, খাদেমুল ইসলাম জামাত বাংলাদেশের দায়িত্বশীল মুফতি তাসনিম, বাংলাদেশ কওমি ছাত্র ফোরামের সদস্য সচিব মাওলানা জামিল সিদ্দীকি, মাসিক আল জামিআর নির্বাহি সম্পাদক মাওলানা আশরাফউল্লাহ, বাবুবাজার মসজিদের খতিব মাওলানা সালমান প্রমুখ।
দায়িত্বশীল এ তরণ আলেমরা মনে করেন, কওমি মাদরাসা সরকারের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান এবং এর সঙ্গে বর্তমানে সরাসরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্ক রয়েছে। কওমি মাদরাসার উপর জঙ্গিবাদের অপবাদ দেওয়া মানে সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করা। কওমি মাদরাসা না কখনো জঙ্গিবাদের সাথে সম্পৃক্ত ছিল, না এখনও আছে। এই সংশ্লিষ্টতা কেউ প্রমাণ করতে পারবে না। যদি তাদের কথামতো ধরে নেওয়া হয় মাদরাসা থেকে সবচেয়ে বেশি সদস্য জঙ্গিবাদে রিক্রুট হয়, তাহলে সরকার কেন সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় না নিয়ে স্বীকৃত দিল। সরকার তো পর্যবেক্ষণ না করে স্বীকৃতি দিতে পারে না। কওমি মাদরাসার ওপর জঙ্গিবাদের অভিযোগ তুলে তারা মূলত সরকারকে ব্যর্থ বলার চেষ্টা করেছে। এর সঙ্গে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তের সম্পর্ক থাকাও অস্বাভাবিক নয়।
তারা আরও বলেন, এই শ্বেতপত্রটি নিরীক্ষার মাধ্যমে দেখা গেছে, গত ২ দশকের সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ বিরোধি বিভিন্ন প্রকাশনা থেকে চৌর্যবৃত্তির মাধ্যমেই প্রায় ৯০% তথ্য এখানে সংকলিত করা হয়েছে এবং এক্ষেত্রে চূড়ান্ত অসততা ও স্বেচ্ছাচারিতার আশ্রয় নিয়ে এসব পুরাতন তথ্য যাচাই, সম্পাদনা বা হালনাগাদও করা হয়নি। ফলে এই শ্বেতপত্রের পাতায় পাতায় অসংখ্য ভুল তথ্য, অর্ধ সত্য ও নানা রকম অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হয়েছে। বর্তমান স্থিতিশীল পরিবেশে হঠাৎ এমন একটি অতি উৎসাহী তৎপরতাকে স্বাভাবিকভাবে দেখার সুযোগ নেই। এটি দেশের সম্প্রীতির পরিবেষ বিনষ্ট করে আলেমদের সরকারের মুখোমুখি করার অপচেষ্টা বলে আমরা মনে করি। তাই দেশের শান্তি শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় এ গণকমিশনের অতি উৎসাহী কাজের শেকড় অনুসন্ধান করা সরকারের দায়িত্ব
বিবৃতিতে বলা হয়, কথিত শ্বেতপত্রের প্রধান উপজীব্য করা হয়েছে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসকে এবং সে জন্য দায়ী করা হয়েছে উলামায়ে কেরামকে। এখানে বিবেচ্য বিষয় দুটি। এক. বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা আসলেই বিরাজমান কিনা এবং দুই. সাম্প্রদায়িক সংঘাতের নামে যা দেখানো হয় তাতে আদৌ ধর্মের কোন সংযোগ আছে কিনা এবং ওলামায়কেরাম সেখানে কোন ধরনের ভূমিকা পালন করেন কি না? সত্যনিষ্ঠ যে কেউ স্বীকার করবেন যে, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার অস্তিত্ব নেই। এখানে হাজার বছর ধরে মন্দির-মসজিদ একসাথে অবস্থান করছে। হাজার বছর ধরে সকল ধর্মের ধর্ম-কর্ম পাশাপাশি পালিত হয়। এটাই চিরসত্য।
হ্যাঁ, কালে-ভাদ্রে সম্প্রদায়কেন্দ্রীক কিছু অশান্তি দেখা যায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও সত্য হলো, এর প্রতিটিতে স্থানীয় রাজনীতি, ভূমি ও স্বার্থের প্রেক্ষিতে সৃষ্ট সংঘাতকে ধর্মীয় চেহারা দেয়া হয়েছে। কোথাও কোথাও ধর্মকে ব্যবহার করা হয়েছে। ইতিহাস সাক্ষী যে, প্রতিটি ঘটনায় উলামা কেরাম বরাবরই শান্তির পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন।
অবিলম্বে কথিত এই শ্বেতপত্র প্রত্যাহার করে ধৃষ্টতামূলক এ কাজের জন্য মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গঠিত কথিত গণকমিশনকে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তরুণ চিন্তক আলেমরা।
Leave a Reply