শুক্রবার , ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

চট্টগ্রামের ৬৬ ইউনিয়নে ৫৮৫৪ ঘর ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এ বিধ্বস্ত

প্রকাশিত হয়েছে-

আলমগীর ইসলামাবাদীঃ- চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি,

উপকূলে বৃষ্টি ঝরিয়ে শক্তি হারিয়ে মধ্যরাতে উপকূল অতিক্রম করেছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। নামানো হয়েছে বিপদ সংকেত। তবে ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ এ বড় ধরনের তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতি না হলেও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে চট্টগ্রামের নিম্নাঞ্চল।

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সৃষ্ট বাতাসে নগরের পতেঙ্গা এলাকায় বিধ্বস্ত হয়েছে বেশকিছু ঘরবাড়ি। এছাড়া জোয়ারের পানিতে আসবাবপত্র সরাতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন মোহরার এক যুবক। আহত হয়েছেন একই পরিবারের আরও দুজন। এছাড়া আনোয়ারা ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় সড়কে গাছ উপড়ে কিছু সময়ের জন্য যান চলাচল ব্যাহত ছিল।

এদিকে গত ২৪ ঘণ্টার জেলা-উপজেলার তথ্য সংগ্রহের পর আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ এর প্রভাবে চট্টগ্রামের উপজেলার মোট ৬৬টি ইউনিয়নের দুর্যোগের কবলে পড়ে। এর মধ্যে ৫৮ হাজার ৫৭২ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এছাড়া আংশিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে ৫ হাজার ৭৬০ এবং সম্পূর্ণ বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে প্রায় ৯৪টি।

অন্যদিকে নিখোঁজ এবং উদ্ধারের তথ্য জানিয়ে কন্ট্রোল রুম থেকে আরও জানানো হয়, চট্টগ্রামের কোথাও নিখোঁজের সংবাদ না পেলে মিরসরাই উপজেলায় একটি বালু উত্তোলনের ড্রেজার উল্টানো অবস্থায় পাওয়া যায়। সেটি উদ্ধারে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস। সেই তথ্যের ভিত্তিতে উদ্ধার তৎপরতায় নেতৃত্ব দেওয়া মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিনহাজুর রহমান ঘটনাস্থল থেকে সিভয়েসকে বলেন, ‘রাতের কোন সময়ে এ ড্রেজার ডুবির ঘটনা ঘটেছে সেটা নিশ্চিত নয়। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন মঙ্গলবার সকালে গিয়ে দেখে এসেছেন ড্রেজারের ভেতরই নিখোঁজ ৮ শ্রমিক বালি চাপা পড়ে আছে। প্রবল স্রোতের কারণে উদ্ধার তৎপরতায় বিঘ্ন হচ্ছে। ড্রেজারে থাকা বেঁচে ফেরা এক শ্রমিকের নাম আব্দুস সালাম। তিনি গতকাল সন্ধ্যার দিকে ফিরে আসেন। ওই শ্রমিক জানিয়েছেন, তার সঙ্গে থাকা অপর ৮ শ্রমিক ড্রেজারের ভেতর হেজেই ছিল তখন। সেখানকার হেজে থাকার কারণে ডুবে যাওয়ায় তারা সেখানেই আটকা পড়ে। এসব কারণে ধারণা করছি তারা ড্রেজারের হেজেই মৃত অবস্থায় আটকে আছে। বালি চাপা পড়ায় মরদেহ উদ্ধারে বিঘ্ন হচ্ছে।’

একই কথা জানিয়ে উদ্ধার অভিযানে থাকা ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স চট্টগ্রামের উপ সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ হারুন পাশা ঘটনাস্থল থেকে সিভয়েসকে বলেন, ‘ঘটনা রাতে ঘটলেও আমাদের মঙ্গলবার বেলা ১১টার পর জানানো হয়। আমরা ১২টার পর থেকে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করি। বর্তমানে দুজন ডুবুরিসহ আমাদের টিম কাজ করছে। সাগরে পানির স্রোত প্রবল হওয়ায় উদ্ধার তৎপরতায় বেগ পোহাতে হচ্ছে।’

নিখোঁজদের মৃতদেহ পাওয়া গেছে কিনা— এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘লাশ উদ্ধার করে পানির উপরে না আনা পর্যন্ত আমি তা অফিসিয়ালি বলতে পারব না। তবে ড্রেজারের ভেতর যে লাশ নেই সেটাও বলতে পারছি না। কিছুক্ষণের মধ্যে সেটি স্পষ্ট হবে।’

অন্যদিকে চট্টগ্রাম নগর এবং উপজেলায় কোনো আহত এবং মৃত্যুর খবর জানাতে পারেনি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কন্ট্রোল রুম। তবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের তথ্য সূত্রে জানা গেছে, ‘মধ্যরাত থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত মোট ৫ জন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে উত্তর মোহরার একই পরিবারের তিনজন এবং কর্ণফুলী ও কক্সবাজারের দুইজন চমেক হাসপাতালে ভর্তি হন। তার মধ্যে একই পরিবারের ৩ জনের মধ্যে মোবারক হোসেন নামে একজনকে মৃত ঘোষণা করেছে কর্তব্যরত চিকিৎসক। বাকিরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এছাড়া ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে যারা খাবার খেতে সমস্যায় পড়েছিলেন তাদের মধ্যে খাবার বিতরণ করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের ম্যাজিস্ট্রেটরা। এর মধ্যে চাল দেওয়া হয়েছে ২১ মেট্রিক টন, শুকনো খাবার ৮শ’ প্যাকেট, অলিম্পিক ড্রাই কেক ৩৭৫ কার্টুন এবং বিস্কিট ৫২০ প্যাকেট। একইসঙ্গে দুর্যোগে পরা মানুষদের মধ্যে ১৫ হাজার পোশাক বিতরণ করা হয়েছে।

অন্যদিকে চট্টগ্রামের ঝুঁকিপূর্ণ ৬টি উপজেলার জন্য দেওয়া হয়েছে ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। উপজেলাগুলো হলো— সন্দ্বীপ, বাঁশখালী, সীতাকুণ্ডে, আনোয়ারা, মিরসরাই এবং কর্ণফুলী। একইসঙ্গে যাদের ঘর ভেঙে গেছে তাদের জরুরি উপকরণ হিসেবে ঢেউটিন এবং গৃহনির্মাণ মজুরি দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ এর প্রভাবে গত ২৪ ঘন্টায় জোয়ারের পানিতে তলিয়ে চট্টগ্রামের বৃহত্তর পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে প্রায় শত কোটি টাকার পণ্যের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন খাতুনগঞ্জ হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস আলী।

অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র মোবিলাইজার কফিল উদ্দিন সিভয়েসকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে চট্টগ্রাম নগরে কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি। তবে উপজেলার আনোয়ারা ও রাঙ্গুনিয়ায় গত রাত ৭টা ৪৫ মিনিটে একটি ও রাত ৮টা ২৫ মিনিটে একটি গাছ উপড়ে পড়ার ঘটনা ঘটে। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি টিম সড়কে ভেঙে পড়া গাছ দুটি অপসারণ করে। উদ্ধার করা পর্যন্ত সাময়িক যান চলাচল বন্ধ ছিল।’