মঙ্গলবার , ২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ১০ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ১৪ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

জোর করে কক্সবাজার আল ফুয়াদ হাসপাতালে সিজার : মারা গেলেন সাংবাদিক এস এন কায়সার জুয়েলের ছোট বোন ফারজানা

প্রকাশিত হয়েছে-

টেকনাফ প্রতিনিধি

কক্সবাজারের একটি বেসরকারি ক্লিনিক থেকে এক প্রসূতি রোগিকে তুলে নিয়ে ফুয়াদ আল খতিব হাসপাতালে জোরপূর্বক সিজার করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে ডাক্তার ও সহকারীদের বিরুদ্ধে। স্বজনদের অনুপস্থিতির সুযোগে এমন কান্ড তৈরি করেছে ফুয়াদ আল খতিব হাসপাতালের চিকিৎসক ফাতিমা জান্নাত। এমন ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আইনি ঝামেলা এড়াতে ভুক্তভোগি পরিবারের সাথে বারবার সমঝোতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মৃত প্রসূতি রোগী ফারজানা (২৭) টেকনাফ পৌরসভার নাইক্ষ্যংপাড়া এলাকার জিয়াউর রহমানের স্ত্রী।

জোর করে অন্য ক্লিনিক থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে সিজারের মাধ্যমে হত্যা করার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করেন ভুক্তভোগি পরিবার। অপরাধীদের বিচারের দাবীতে বুধবার (৮ জুন) দুপুরে কক্সবাজার প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের মাধ্যমে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এমন অনিয়ম ও ভুল চিকিৎসার অভিযোগ তুলেন ধরেন ভুক্তভোগিরা। এরপর পরেই কক্সবাজার আদালত প্রঙ্গনে মানববন্ধনের মাধ্যমের বিচার চান তারা।

নিহতের স্বামী জিয়াউর রহমান বলেন, গত শনিবার (৪ জুন) টেকনাফ থেকে আমার স্ত্রী, আমি ও দুই সন্তানসহ কক্সবাজার এসে একটি হোটেলে উঠি। হোটেলে জিনিস পত্র রেখে বিকালে সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে যায় স্ত্রীসহ সন্তানদের নিয়ে। ওখান থেকে সন্ধ্যায় হোটেলে ফিরে যায়। এরপর রাত ৮ টার দিকে ফুয়াদ আল খতিব হাসপাতালে আমার স্ত্রীকে ডাক্তার দেখা যায়। ডাক্তার দেখানোর পর পরীক্ষা দেওয়া হয়। পরীক্ষা দিতে শেভরন ক্লিনিকে নিয়ে যায় আমার স্ত্রীকে। ওখানে পরীক্ষা দিয়ে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় রাখা হয় রিপোর্টের জন্য। ওই সময়ে আমি দুই সন্তান নিয়ে খাবার খেতে কলাতলীর একটি রেস্টুরেন্টে যায়। খাবার খাওয়ার সময় রাত ১১ টার দিকে স্ত্রীর মোবাইল থেকে ফোন আসে ওনাকে দুইজন লোক ফুয়াদ আল খতিব হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে। তখন আমি বলছি তুমি এখন যাবে না, আমি আসলে যাবে। এই কথা বলার পরও তারা জোর করে নিয়ে যায়।

সাড়ে ১১ টার দিকে আমি হাসপাতালে গিয়ে দেখি আমার স্ত্রীকে অপারেশন রুমে নিয়ে গেছে। ওই সময় ডাক্তার ফাতিমা জান্নাত বলেন; আপনার স্ত্রীর অবস্থা বেশি খারাপ। এখন সিজার করতে হবে। ডাক্তারের এমন কথা শুনে আমি দিশেহারা হয়ে পড়ি।

জিয়াউর রহমান বলেন- আমার স্ত্রী সম্পূর্ণ সুস্থ। সমুদ্রসৈকতে হাটা চলা ফেরাও করেছে বিকালে। আল্ট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট অনুযায়ী আমার স্ত্রীর আরো ১ থেকে ২ সপ্তাহ সময় আছে। কিন্তু চিকিৎসক নিশ্চিত করে জানালেন এখনই সিজার করতে হবে। অন্যথায় বড় সমস্যা দেখা দিতে পারে। তখন বাজে রাত ১১ টা ৪০ মিনিট। এত রাতে সিজার করতে টাকা পাব কয়! আমি আমার স্বজনদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য আমার স্ত্রীর বড় ভাই সাংবাদিক কাইসারুল হক জুয়েলকে নিয়ে বের হয়। আমার এক চাচার কাছে গিয়ে টাকা নিয়ে প্রায় রাত সাড়ে ১২টার সময় হাসপাতালে এসে দেখি আমার স্ত্রী নেই। হাসাপাতলের একজন দায়িত্বরত স্টাফ আমাকে বলল আপনার স্ত্রীকে সিজার করতে ডাক্তার ভেতরে নিয়ে গেছে।

নিহতের স্বামী বলেন, প্রায় ৩ ঘন্টা পর আমাদেরকে ডাক্তারে এসে বলল; আপনার সন্তান নেন। আপনার স্ত্রীর অবস্থা ভালনা। তখন ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করলাম কি সমস্যা হয়েছে। ডাক্তার উত্তর না দিয়ে চলে গেছেন এবং আমার স্ত্রীকে রেফার করলেন জেলা সদর হাসপাতালের আইসিইউতে। এরভিতরে ৭ ব্যাগ রক্তও সংগ্রহ করে দিয়েছি ডাক্তারের কথা মতো। কিন্তু তারা আইসিইউতে রেফার করেন।
জিয়াউর রহমান বলেন- আমার ধারণা তারা যখন রেফার করছে আইসিইউতে এর আগে আমার স্ত্রী মারা গেছে। আমার স্ত্রীকে জোরপূর্বক সিজার করে হত্যা করা হয়েছে। এমনকি হত্যা করেও তারা গোপন রেখে অন্য হাসপাতালে রেফার করেন।

নিহতের বড় ভাই সাংবাদিক কায়সারুল হক জুয়েল বলেন, আমাদের না জানিয়ে এবং আমাদের অনুপস্থিতিতে কেন আমার বোনকে সিজার করা হয়েছে। আমার বোন ফারজানা সম্পূর্ণ সুস্থ ছিল। ভুল চিকিৎসায় তাকে মেরে ফেলা হয়েছে।

এবিষয়ে চিকিৎসক ডাক্তার ফাতিমা জান্নাতের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। এতে বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

কক্সবাজার ফুয়াদ আল খতীব হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুদ্দিন খালিদ জানান, আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ বোর্ড গঠন করে চেষ্টা করেছি। হয়ত তার হায়াত এতটুকুই ছিল।
তিনি বলেন, স্বামীর এবং তার স্বজনদের দরখাস্ত নিয়েই আমরা সিজার করেছি।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার (ওসি) তদন্ত মো. সেলিম উদ্দিন জানান, ফুয়াদ আল্ খতীব হাসপাতালে রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় এখনও কোনো অভিযোগ আসেনি। তবে রোগীর চিকিৎসার সব কাগজপত্র দেখা হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।