
টেকনাফ প্রতিনিধি,
কক্সবাজারের টেকনাফে স্কুল থেকে পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরার সময় ব্যাটারি চালিত রিক্সা থেকে জোর পূর্বক নামিয়ে তাসফিয়া আলম নামে এক ছাত্রীকে অপহরণ করেছিল স্থানীয় ইয়াবা কারবারি ও সন্ত্রাসী কামরুল ইসলাম ওরফে আব্বুইয়া। গত ২৬ অক্টোবর বিকালে এ ঘটনাটি ঘটে। পরে খবর পেয়ে পুলিশের অভিযানে উদ্ধার হয় তাসফিয়া। পালিয়ে যায় অপহরণকারী আব্বুইয়া ও তার সহযোগীরা। ঘটনার পরে টেকনাফ থানায় গিয়ে মামলা করেন তাসফিয়ার বাবা শাহ আলম। তাসফিয়ার বাড়ি উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের খারাংখালী মহেষখালীয়া পাড়ায়। অপহরণকারী আব্বুইয়ার বাড়িও একই এলাকায়।
তাসফিয়া স্থানীয় নয়াবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের ২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী।
তাসফিয়ার বাবা ও তার পরিবারের অপরাপর সদস্যদের ধারণা ছিল, মামলার পর অপহরণকারী আব্বুইয়া ও তার সহযোগীরা পালিয়ে বেড়াবে বা জেলে ঢুকবে। তাসফিয়া নিয়মিত আবারো স্কুলে যাবে। কিন্তু ঘটনা ঘটে বিপরীত। মামলার পর থেকে স্কুল ছাত্রী অপহরণকারী এলাকার চিহ্নিত মাদককারবারি আব্বুইয়া তাসফিয়ার বাড়িতে গিয়ে তার বাবা শাহ আলমকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দিয়ে আসে।
এতেও ক্ষান্ত হতে না পেরে আব্বুইয়া শাহ আলমের একটি বাগানের প্রায় দুই শতাধিক গাছ কেটে ফেলে। দিনদুপুরে আব্বুইয়ার সন্ত্রাসী কর্মকা-ে অতিষ্ট হয়ে শেষমেষ নিরাপত্তাহীনতায় তাসফিয়ার স্কুল যাওয়া বন্ধ করে দেয় পরিবার।
এদিকে ঘটনার প্রায় সপ্তাহ দশদিন পার হলেও সন্ত্রাসী আব্বুইয়া এলাকায় ঘুরে বেড়ানোর পরও পুলিশ তাকে আটক করতে পারেনি। এদিকে চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন পার করছে মামলার বাদী তাসফিয়ার বাবা ও তার পরিবার। তবে পুলিশ দাবি করছে তারা আব্বুইয়াকে ধরতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন এবং অভিযানও অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে এসএসসি পরীক্ষার্থী তাসফিয়ার অপহরণকারী আব্বুইয়া ও তার সহযোগীদের গ্রেফতার পূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে সহপাঠী স্কুল শিক্ষার্থীরা।
আজ রবিবার দুপুর ১২ টার দিকে উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের নয়াবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এতে শিক্ষার্থী ছাড়াও শিক্ষক এবং বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে মানববন্ধনে তাসফিয়ার সহপাঠীরা দাবি করেছেন, ২৬ অক্টোবর ঘটনার পর থেকে তাসফিয়া ও তার পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। নিরাপত্তাভাবে তাসফিয়ার পড়ালেখা ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। তাসফিয়ার অপহরনকারী আব্বুইয়া ও তার সহযোগীরা এলাকায় এখনো দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে সমাজে এসব অপরাধ দিনদিন বাড়বে।
তাসফিয়ার স্কুল নয়াবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুপম কান্তি বড়ুয়া বলেন, ঘটনার পর থেকে তাসফিয়ার স্কুলে আসা বন্ধ রয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে নিরাপত্তাহীনতার কথা বলছেন। আমরা চাই এ ঘটনায় দোষীদের শাস্তি হোক, তাসফিয়ার স্কুলে ফেরার পথ সুগম হোক।
স্কুল ছাত্রী তাসফিয়ার বাবা শাহ আলম জানান, গত ২৬ অক্টোবর আমার মেয়ে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে রিক্সা থেকে জোরপূর্বক নামিয়ে একটি কার গাড়িতে তুলে নেয়। পরে পুলিশ আমার মেয়েকে উদ্ধার করেন এবং আমি আব্বুইয়াসহ তার সহযোগিদের আসামি করে টেকনাফ থানায় একটি মামলা দায়ের করি। মামলার পর সে আমাকে এবং আমার পরিবারের সদস্যদেরকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এমনকি মামলায় ক্ষুব্ধ হয়ে সে গত ১ নভেম্বর দিবাগত রাতে আমার একটি বাগানের প্রায় দুই শতাধিক গাছ কেটে ফেলে। সে নিজেকে র্যাবের সোর্স পরিচয় দেয়। কোমরে সবসময় অস্ত্র বহন করে। যে তার বিরুদ্ধে কথা বলে তাকে নানা ধরনের হুমকি ধমকি দেয়।
পুরো এলাকায় সে এখন ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে।
পুলিশ জানায়, হোয়াইক্যং খারাংখালী মহেশখালীয়া পাড়ার মমতাজ মিয়ার ছেলে কামরুল ইসলাম ওরফে আব্বুইয়া এলাকার চিহ্নিত একজন মাদক কারবারি ও সন্ত্রাসী। তিনি অস্ত্র, মাদক, নারী ও শিশু নির্যাতন সহ চারটি মামলার পলাতক আসামী।
Leave a Reply