শনিবার , ১১ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ২৭শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - শীতকাল || ১১ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি

টেকনাফ উপজেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন নিয়ে তৃণমূল কর্মীদের জল্পনা কল্পনার শেষ নেই

প্রকাশিত হয়েছে-

ওসমান আল-হুমাম, কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি।

 

আসছে ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ টেকনাফ উপজেলা ছাত্রলীগের বহুল প্রতীক্ষিত সম্মেলন। এ আকাঙ্ক্ষিত সম্মেলনকে ঘিরে হাজার হাজার তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে উচ্ছ্বাস উদ্দীপনা। ঝিমিয়ে পড়া হাজার হাজার নেতাকর্মী এখন উজ্জীবিত। সবাই সোস্যাল মিডিয়া সোচ্চার হয়ে নেতৃত্বের পরিবর্তনের কথা বলে পোস্ট করছেন। শিক্ষা শান্তি প্রগতির পতাকাবাহী বাংলাদেশ ছাত্রলীগ টেকনাফ উপজেলা শাখার প্রতিটি কর্মীর মধ্যে এখন সাজ সাজ রব৷ চলছে নানা জল্পনা কল্পনা। কে হচ্ছেন টেকনাফ উপজেলা ছাত্রলীগের নতুন কাণ্ডারী। কে হচ্ছেন শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত ভ্যানগার্ড। জোর আওয়াজে শুনা যাচ্ছে সভাপতি প্রার্থী হিসেবে সদ্য প্রয়াত সাবেক সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীর কনিষ্ঠ পুত্র কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তারেক মাহমুদ রনি ও বর্তমান টেকনাফ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম মুন্নার নাম। সাধারণ সম্পাদক পদে আসছে একাধিক প্রার্থীর নাম। তন্মধ্যে মুহাম্মদ শাহীন, আব্দুল বাসেত, তারকে মাহমুদ নূর, প্রশান্ত পলাশ, সাইয়েদ আমীন নিশান, সাইফুল ইসলাম সোহাদ, ইব্রাহীম বাবুল। এছাড়া বিশেষ সূত্রে জানা যাচ্ছে সাধারণ সম্পাদক পদে এমপি পুত্র শাওন আরমানেরও নাম।
উপমহাদেশের প্রাচীনতম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দুর্যোগ দুর্বিপাকে এদেশের মানুষের পাশে থেকেছে সবসময় সর্বত্র। সেই ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন কোনো সিন্ডিকেটের হাতে যুগযুগ ধরে কব্জা হয়ে থাকবে, তা কোনোভাবে মেনে নেয়া যায় না। এমনটি আওয়ামীপ্রেমী মানুষের প্রত্যাশা। ৫ বছর পরে হলেও সম্মেলনের ডেট ঘোষণা করবার জন্য কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদককে প্রশংসার সাগরে ভাসাচ্ছে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। সবার প্রত্যাশা নতুন নেতৃত্বের মাধ্যমে টেকনাফের ছাত্র রাজনীতির সোনালি ঐতিহ্য ফিরে এসে সংগঠনের গতিশীলতা বাড়বে এবং টেকনাফ উপজেলা ছাত্রলীগের প্রতিটি ইউনিট সুসংহত হবে।
অনেকে ব্যথিত হয়ে বলছেন ২৫ তারিখ সম্মেলনে বর্তমান টেকনাফ উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম মুন্না সভাপতি প্রার্থী হওয়া মোটেও উচিত হচ্ছে না। এবং সাইফুল ইসলাম মুন্নার সভাপতি প্রার্থী হবার বিষয়টি টেকনাফ উপজেলা ছাত্রলীগের প্রতিটি কর্মীর মনে প্রচণ্ডভাবে আঘাত করেছে বলেও অনেকে মন্তব্য করছেন। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলেন, একজন মানুষ ৪ মেয়াদে সাধারণ সম্পাদক থাকবার পরও এখনো ছাত্রলীগ করবার খায়েশ তার শেষ হচ্ছে না, যা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং নীতিবহির্ভূতও বটে। হ্নীলা ইউনিয়নের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ নাসির আপসোসের সুরে বলেন, কিছু কথা অপ্রিয় হলেও সত্য সাইফুল ইসলাম মুন্না ভাই ৪ মেয়াদে তথা ৮-১০ বছর সাধারণ সাধারণ সম্পাদক পদে থাকা অবস্থায় টেকনাফ উপজেলা ছাত্রলীগকে আদর্শের মহিমায় গড়ে তোলা তো দূরের কথা, বরং প্রতিটি ইউনিটে ইউনিটে কমিটি পাল্টা কমিটি করে অন্তঃদ্বন্দ্ব জিইয়ে রেখেছেন। হোয়াইক্যং ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন বলেন, সাইফুল ইসলাম মুন্না ভাই টাকার বিনিময়ে ইয়াবা ব্যবসায়ী ও রাজাকার পুত্র/নাতীদের হাতে কমিটি দিয়ে জন্ম দিয়েছে বহু বিতর্কের। কলঙ্কিত করেছে আন্দোলন সংগ্রাম থেকে জন্ম নেয়া বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে। এমনকি গত উপজেলা নির্বাচনে সাইফুল ইসলাম মুন্না ভাই দেশরত্ন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে গিয়ে মোটরসাইকেল প্রার্থীর জন্য জানবাজি রেখে কাজ করেছেন এবং তার নির্দেশে টেকনাফের অধিকাংশ ছাত্রলীগ কর্মী নৌকার বিরুদ্ধে ভোট করে নৌকার প্রার্থীকে ডুবিয়েছেন। বাহারছড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক মিজানুর রহমান মিজান বলেন, আমাদের মতো কিছু সংখ্যক ছাত্রলীগ কর্মী সাইফুল ইসলাম মুন্না ভাইয়ের কথা অমান্য করে মুজিবাদর্শে অটল থেকে নৌকার পক্ষে কাজ করাতে তার রোষানলে পড়ে হুমকিধামকি, ভয়ভীতির সম্মুখীন হয়েছি তথা আমাদের কমিটি ফ্রিজ করে দেয়ার মতো অবস্থাও ঘটেছে। সত্যিকার অর্থে শতো বাঁধা উপেক্ষা করেও বুকে মুজিবাদর্শ ধারণ করা ছাত্রলীগ কর্মীরা টেকনাফ এলাকায় এখন ভীষণরকম কোনঠাসা। বলা চলে টেকনাফে অনেকটা একনায়কতন্ত্র শাসনব্যবস্থা কায়েম করবার মতো ৮-১০ বছর ধরে একপ্রকার রামরাজত্ব চালাচ্ছে সাইফুল ইসলাম মুন্না। আমরা মনে করি আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে এ কলঙ্কজনক অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটবে। আমরা এও মনে করি সন্মেলনের স্থান অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং কাউন্সিলর লিস্ট অস্বচ্ছ। যেহেতু ৮-১০ বছর ধরে সাইফুল ইসলাম মুন্না ভাই ৪ মেয়াদে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বহাল তবিয়তে আছেন, সেহেতু সে বেছেবেছে তার অত্যন্ত অনুগতদের কাউন্সিলর করবে তা বলবার অপেক্ষা রাখে না, সহজে অনুমেয়। তাই আমাদের আকুল আবেদন কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের প্রতি সম্মেলনের দিন পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করে স্বচ্ছ, পরিচ্ছন্ন ও ত্যাগী নেতা নির্বাচন করবার মাধ্যমে টেকনাফ উপজেলা ছাত্রলীগের কলঙ্ক ঘোচানোর পথকে আপনারা সুগম করবেন।
টেকনাফ উপজেলার সচেতন মানুষ কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটির উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রেখে প্রত্যাশা করেন, সাদ্দাম মারুফের হাত ধরে টেকনাফ উপজেলা ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়ে একটি মাইলফলক রচনা হবে। সর্বোপরি এতোদিন ধরে গঞ্জনা বঞ্চনার শিকার হয়ে আসা তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে প্রাণের সঞ্চার ঘটবে বলেও সাধারণ মানুষ মনে করেন।