দুই বন্ধুর হারাম পরিত্যাগ- UkhiyaVoice24.Com

রচনায়- মু.আমির কাসেম

সাঈদ ও ফারুক দুই বন্ধু। উভয়ে নূরানী মাদরাসার প্রথম শ্রেণীতে পড়ে। লেখা-পড়ায় একে অপরের প্রতিদন্দ্বী হলেও বন্ধুত্বে কখনো ভাটা পড়ে না। কথায় বলে না “গলায় গলায় ভাব”, তারাও ঠিক এরকমই।

আজকে মাদরাসার দ্বিতীয় সাময়ীক পরীক্ষা শেষ, তাই মাদরাসা তিন দিন বন্ধ থাকবে। মাদরাসা বন্ধ হলেও লেখা-পড়া বন্ধ নেই। এ তিন দিনে যেন লেখা-পড়ায় ব্যাঘাত না ঘটে, এ জন্য কিছু পড়া মুখস্ত করার জন্য দিছেন এবং প্রতিদিন লেখার জন্য বাড়ির কাজ দিছেন।

সাঈদ ও ফারুক দুই বন্ধু মিলে মাদরাসা ছুটির পর বন্ধের দিনগুলো কিভাবে কাটাবে, এ পরিকল্পনা নিয়ে ব্যস্ত।অনেক্ষণ আলাপ-আলোচনার পর সিদ্ধান্তের পালা আসলো।

সাঈদ বললো- তুই কী করবি তুই জানোস। তবে আমি আমার কর্মসূচি নির্ধারণ করে ফেলেছি। আগামী ‍বৃহঃবার মামার বাসায় বিয়ে উপলক্ষ্যে মেজবানের আয়োজন আছে। বাড়ির কাজগুলো আজ এবং আগামীকাল দু’দিনে শেষ করে পরশু বৃহঃবার সেখানে চলে যাবো। মামাতো ভাই শাকিলের সাথে খেলবো আর মজা করে মেজবান খাবো।

ফারুক চুপচাপ সাঈদের কথা শুনছিল আর ভাবছিল- হুজুর তো ক্লাসে বলেছেন যে, যে বাড়িতে গান-বাজনা হয়, সে বাড়িতে মেজবানের খানা না খেতে। তাহলে সাঈদ যাচ্ছে কেন? তার কি হুজুরের কথা স্মরণ নেই? যখন সাঈদের কথা শেষ হলো, ফারুক মুখ খুললো। বললো- আরে সাঈদ! বলিস কি? তোর মামার বাড়িতে না গত এক সপ্তাহ ধরে গান-বাজনা হচ্ছে? সেখানে তুই যাবি মেজবানের খানা খেতে?

-ধন্যবাদ বন্ধু! তুই ভালো কথা স্মরণ করিয়ে দিছিস। তবে আমার বুঝে আসছে না, হুজুর কেন সেদিন নিষেধ করলেন যে বাড়িতে গান-বাজনা হয়, সে বাড়িতে খানা খেতে?

– আরে এ সহজ বিষয়টাও বুঝিস না? গান-বাজনা করা একদিন দিয়ে হারাম। আবার অপব্যয়ও। হুজুর একবার বলেছিলেন, যারা অপব্যয় করে তারা নাকি শয়তানের ভাই। আর অপব্যয় তারাই করে, যাদের অঢেল সম্পদ অবৈধ উপায়ে আসে। অবৈধ উপায়ে উপার্জন তো হারাম। আজকেই তো পরীক্ষায় আসলো ১৬ নাম্বার হাদীস।“ হারাম ভক্ষণকারীর শরীর বেহেশতে প্রবেশ করবে না।” এবার তুই বল্ হুজুর কেন নিষেধ করেছেন।

– তোকে অসংখ্য ধন্যবাদ। তোর মতো করে আমি বুঝতে পারিনি। এজন্যেই তো তুই সবসময় ক্লাস ফাস্ট থাকিস।

– এই বেডা পাম দিস না । কী বুঝেছিস বল আগে।

– যদিও মামার উপর্জন হারাম উপায়ে হচ্ছে কিনা জানি না, তবে তোর যুক্তি অনুযায়ী তার উপার্জন হারাম উপায়ে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মামার উপার্জন যদি হারাম উপায়ে হয়ে থাকে, তাহলে মেজবানের যে আয়োজন হচ্ছে তা খাওয়াও হারাম হবে। তাছাড়া এখন মনে হচ্ছে, গান-বাজনা করে যেহেতু আয়োজন হচ্ছে, এই গান-বাজনার কারণেও হারাম হতে পারে। সেখানে খানা খেয়ে নিজের শরীরকে জাহান্নামের খোরাক বানানোর কোন দরকার নেই। তোকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই সময় আসরের আজান শুনে আলোচনা শেষ করে উভয়ে মসজিদের দিকে হাটা শুরু করলো।

আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাইকে সমস্ত হারাম কাজ এবং হারাম ভক্ষণ থেকে হেফাজত করুন। আমীন।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *