শুক্রবার , ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ - বসন্তকাল || ১৯শে রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

নাইক্ষ‍্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে আসা গরু বৈধ করার নিরাপদ স্থান ‘খামার’

প্রকাশিত হয়েছে-

মোঃ ইফসান খান ইমন:- নাইক্ষ‍্যংছড়ি,

নাইক্ষ‍্যংছড়ি- মায়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকার গহীণ অরণ্য অবৈধ বার্মিজ গরু মজুদের নিরাপদ স্থান। সম্প্রতি আইনশৃংখলা বাহিনীর তৎপরতায় কৌশল পাল্টেছে চোরাকারবারীরা। এবার তারা ভ্যাটেনারি বিভাগ থেকে বৈধতা নিয়ে খামার গড়ে তুলছে। যেখানে অবৈধ বার্মিজ গরু এনে বৈধ করা হচ্ছে প্রতিদিন।

বিগত কিছু দিনে বান্দরবানে তিন ক্যাটাগরিতে অন্তত ৩১টি গবাদি পশুর খামারের অনুমোদন দিয়েছে জেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগ।
মিয়ানমারের গরু পাচারের নিরাপদ এলাকাগুলোতে তড়িঘড়ি করে এসব খামারের জন্য সুপারিশ করেছে উপজেলা ভ্যাটেনারি দপ্তরগুলো। তবে ‘তড়িঘড়ি করে খামার অনুমোদন’ বিষয়টি অস্বীকার করে বান্দরবান জেলা ভ্যাটেনারি কর্মকর্তা পলাশ কান্তি চাকমা বলেন, দুধ, ডিম, মাংসের চাহিদা পূরণের জন্য নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া মেনেই খামারের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
তবে খামারে অবৈধ কোন কাজ করলে অবশ্যই আইনশৃংখলা বাহিনী ব্যবস্থা নিবেন।

জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত অনুমোদন দেওয়া খামারগুলোর মধ্যে অধিকাংশ নাইক্ষ্যংছড়ি ও আলীকদম উপজেলায়। চলতি মাসে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় গরু মোটাতাজাকরণ ও হৃষ্টপুষ্ট খামারের অনুমোদন নিয়েছেন বাইশারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম। মের্সাস আলম গবাদিপশু খামার নামে তিনি উত্তর বাইশারী এলাকায় খামারটি করেছেন বলে জানা গেছে, ভ্যাটেনারি বিভাগে দেয়া তথ্যমতে তার খামারে ১৪০টি দেশীয় গবাদিপশু রয়েছে।
এছাড়া করলিয়ামুরা এলাকায় মের্সাস আবুল কালাম ফার্মের অনুমতি নিয়েছেন সাবেক ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি আবুল কালাম।
তার খামারে ১২৮টি গরু থাকার তথ্য দিয়েছেন। কাগজিখোলা এলাকায় মেসার্স সুলতান গবাদিপশু খামার অনুমোদন নিয়েছেন মো. ইব্রাহিম। তার খামারে ৫০টি এবং সোনাইছড়ি ইউনিয়নের জারুলিয়াছড়ি এলাকার মৌজা হেডম্যান মংওয়াইন মারমা মের্সাস প্যারেন্ট ফার্ম নামে অনুমোদন নিয়েছেন। বর্তমানে তার খামারে ৫০টি গবাদি পশুর রয়েছে বলে তথ্য দিয়েছেন।

এদিকে নতুন গড়ে উঠা খামারের বিষয়ে বাইশারী ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার সাদেক হোসেন ও আবু তাহের এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা জানান, তাদের এলাকায় খামারগুলোতে ৮-১০টির মত গরু রয়েছে। অন্যদিকে স্থানীয়রা জানান, মায়ানমার থেকে আনা চোরাইগরু মজুদের জন্য মূলত খামারগুলো গড়ে তোলা হয়েছে। বিভিন্ন সময় আইনশৃংখলা বাহিনীর চোখ ফাকি দিয়ে খামারগুলোতে বার্মিজ গরু আনা-নেওয়া হয় বলে ব‍্যাপক জন শ্রুতি রয়েছে।
দিনের বেলায় একরকম গরু দেখা গেলেও পরের দিন তা দেখা যায় না বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই জানান।

নাইক্ষ্যংছড়ি ও আলীকদম দুই উপজেলার সীমান্ত দিয়ে গত তিন মাসের অধিক সময় ধরে মায়ানমার থেকে অবৈধভাবে গরু পাচার বেড়েছে। গরুর আড়ালে একটি সিন্ডিকেট মাদকও নিয়ে আসছে বলেও লোকমুখে ব‍্যাপক বলাবলি চলছে। বিশেষ করে আলীকদম-দোছড়ি-বাইশারী এবং নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার আশারতলী-কম্বনিয়া-ফুলতলী, জারুলিয়াছড়ি সীমান্তে প্রতিদিন বার্মিজ গরুর সঙ্গে পাচার হচ্ছে মাদক। সম্প্রতি আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবি কর্তৃক আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মাদকের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন বিজিবির কর্মকর্তারা।

নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারী, আশারতলী, কম্বনিয়া ও আলীকদম সদরে সরেজমিনে স্থানীয়রা জানান, কিছু জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের ব্যাক্তিদের কাছের মানুষগুলো হঠাৎ করেই খামার গড়ে তোলাই এলাকায় প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তারা জানান, চোরাকারবারীরা মায়ানমার থেকে আনা চোরাই গরু পাহাড়ে এবং খামারে মজুদ করে। পরবর্তীতে বাজার ইজারাদার থেকে রশিদ সংগ্রহ করে খামারীর গরু পরিচয় দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করে থাকে। সচেতন মহলের মতে, আপাতদৃষ্টিতে গরু ব্যবসায় স্থানীয় এক শ্রেণি উপকৃত হলেও বিপরীতে সরকার মোটা অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে গরু ব্যবসার আড়ালে মাদকের চালানও ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র।