নিষেধাজ্ঞা শিথিল অবশেষে চিরচেনা রূপে ইনানী সমুদ্র সৈকত

 

শাহেদ হোছাইন মুবিন, উখিয়া।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে বিধিনিষেধ আরোপের ৪ মাস ১৯ দিন পর অবশেষে আজ থেকে (১৯ আগস্ট) শর্ত সাপেক্ষে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত হয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের উখিয়া ইনানী, পাথর রাণী বিচ সহ কক্সবাজারের সব বিনোদন কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে । করোনার কারণে প্রায় ৪ মাস ১৯ দিন ধরে অন্যান্য পর্যটন স্পষ্টের পাশাপাশি ইনানী সমুদ্র সৈকতেও প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল। যার কারণে পর্যটকশূন্য ছিল সৈকত।

বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) আবারও চিরচেনা রূপে ফিরতে শুরু করেছে উখিয়ার ইনানী সমুদ্র সৈকত। বিকেলের মধ্যেই ইনানী সমুদ্র সৈকতের পাশাপাশি অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রগুলোও প্রাণ চাঞ্চল্যে ভরে উঠছে।

বরণ করে নিতে পর্যটকদের ইনানী ও আশপাশের হোটেল-মোটেল ও রেস্তোরোঁগুলো পরিচ্ছন্নতা শেষে উপযোগী করে আজ পুণরায় চালু হয়েছে।

সমুদ্র সৈকতে অবস্থিত ছোট ছোট দোকান, হকার, শামুক-ঝিনুকের দোকানগুলোও খোলা হয়েছে।

সমুদ্র সৈকতে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলা এবং শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যাপারে প্রশাসন এর বেশ কিছু শর্ত আরোপ করে দিয়েছে। এমনকি সৈকতে মাস্ক পরিধান থেকে শুরু করে বালুচরের পর্যটন ছাতার দুরত্ব, হোটেল-রেষ্টুরেন্টের টেবিল-চেয়ারের দুরত্ব অবশ্যই তিন ফুটের বেশি রাখারও নির্দেশনা বাধ্যতামূলক বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

সাগর পাড়ের বিচ মার্কেট, সৈকতের কিটকট, বিচ বাইক ও জেটস্কি, প্যারাসেইলিংসহ সব কিছুতেই দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে বলে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

পুরনো রূপে ফিরতে শুরু করেছে চিরচেনা ইনানী সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে ভিড় করতে শুরু করেছেন পর্যটকসহ দর্শনার্থীরা। দীর্ঘসময় পর ঘরবন্দী মানুষগুলো সৈকত দেখতে পেয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত।
পর্যটকদের সমাগমে ইনানী সমুদ্রসৈকত এখন মুখরিত। নেচে-গেয়ে দীর্ঘদিনের ঘরবন্দী মানুষ মিলিত হয়েছে প্রাণের স্পন্দনে।সব কিছু মিলিয়ে দীর্ঘদিনের সুনসান নীরব পর্যটনকেন্দ্র ইনানী পুনরায় ফিরে পেয়েছে পূর্ণতা। সৈকতের দর্শনীয় স্থানগুলো বাইকে ঘুরে দেখছেন ভ্রমণপিপাসুরা।

স্থানীয় দর্শনার্থী আহমেদ শফি বলেন, “করোনা পরিস্থিতি কারণে সৈকত প্রবেশ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ ছিল। সম্প্রতি সৈকতে প্রবেশে শিথিলতার আসার পর ঘুরতে আসলাম। এখন সৈকতে এসে অনুভূতি প্রকাশ করার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। কারণ সমুদ্র সৈকত প্রত্যেক ভ্রমণপিসাসুর জন্য পছন্দের একটি স্থান।”

ঢাকা থেকে আসা পর্যটক করিম বলেন, “ঘরবন্দি জীবন থেকে মুক্তি পেয়ে সৈকত দেখতে আসলাম। এখন সৈকতে এসে দীর্ঘদিনের ক্লান্তি দূর করার চেষ্টা করছি।”

আরেক পর্যটক তাহমিনা বলেন, “এখন সৈকত দেখে মনে হচ্ছে সেই পুরানো চিরচেনা সৈকতকে ফিরে পাচ্ছি জনগণের সমাগম দেখে। শুধু বাড়তি যুক্ত হয়েছে কিছু মানুষের মুখে মাস্ক আছে, আবার অনেকে হ্যান্ডস গ্লাভস রয়েছে। কিছু মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে, আবার অনেকে স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা করছে না। যা আমাদের সবার জন্যই ক্ষতি।”

বিচ চালক হামিদ বলেন, “অনেক দিন পর প্রাণ ফিরে পেয়েছি। কারণ সৈকতে মানুষজন আসছে। তাদেরকে বিচ বাইকে চড়িয়ে কিছু অর্থ উপার্জন হচ্ছে।”

ফটোগ্রাফার আব্দুল্লাহ বলেন, “দর্শনার্থীদের ছবি তুলতে ক্যামেরা হাতে সৈকতে নেমেছি অনেক দিন পর। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ৫’শ টাকা আয়ও করেছি। এখন খুবই খুশি লাগছে।”

আজ থেকে আবারও চিরচেনা সেই পুরনো রূপে ফিরবে সমুদ্র সৈকত। থাকবে না আর পাখিদের কিচিরমিচির ও সাগরলতার স্বাধীন চৈতন্য।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় তার প্রতিরোধে দেশব্যাপী বিধিনিষেধ ও কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ চলাকালে চলতি বছরের ১ এপ্রিল বন্ধ ঘোষণা করা হয় দেশের সব পর্যটনকেন্দ্র। প্রায় সাড়ে ৪ মাস পর কক্সবাজারের সব পর্যটনকেন্দ্র খোলা হয়েছে (১৯ আগস্ট)। গত ১০ আগস্ট থেকে দেশের সব বিভিন্ন আবাসিক হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলো খুলে দেওয়া হয়।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More posts