শুক্রবার , ২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - শীতকাল || ২৫শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য ভারতীয় আধিপত্যকে স্পষ্ট করেছে-মুফতি ফয়জুল করিম শায়খে চরমোনাই।

প্রকাশিত হয়েছে-

আলমগীর ইসলামাবাদী চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি”

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীম (শায়খে চরমোনাই) বলেছেন, স্বাধীন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়ে ভারতের কাছে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার অনুরোধ করে দেশের ভাবমূর্তি যেমন ক্ষুন্ন হয়েছে, ঠিক তেমনিভাবে ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতা দখলে রাখার বিষয়টি আবারও স্পষ্ট হয়েছে। আওয়ামী সরকারকে মনে রাখা দরকার ভারত সবসময় নিজেদের স্বার্থের চিন্তা করে। আর এ সরকার ভারতকে দিতেই পছন্দ করে। শুধু দিয়ে খুশি করতেই তৃপ্তি পায় সরকার। কারণ এ সরকার জনগণের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কোনভাবেই নির্বাচিত সরকার নয়। তিনি বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের ব্যাখ্যা প্রধানমন্ত্রীকে দিতে হবে।

আজ ২৪ আগস্ট, ২০২২ বুধবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সার্বভৌমত্ববিরোধী ও রাষ্ট্রদ্রোহী বক্তব্যের প্রতিবাদ, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিরোধ ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহারের দাবিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর আয়োজিত বিশাল বিক্ষোভ পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। দলের সহকারি মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ পূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দলের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, সহকারি মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, কেএম আতিকুর রহমান, মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম, মাওলানা নেছার উদ্দিন, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাকী, মাওলানা আরিফুল ইসলাম, ডা. শহিদুল ইসলাম, কেএম শরীয়াতুল্লাহ, মুফতী ফরিদুল ইসলাম, খালেদ সাইফুল্লাহ প্রমূখ নেতৃবৃন্দ।

মুফতি ফয়জুল করীম বলেন, সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রী’র মতো। এর আগে বলেছেন বাংলাদেশের মানুষ বেহেশতে আছে। তার বক্তব্যের দিনই পার্বত্য অঞ্চলে একজন মা ক্ষুধার জ্বালা নির্বারণে সন্তান বিক্রি করতে বাজারে তোলেন; যা মিডিয়ায় প্রকাশিত। প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, আমি ভারতকে যা দিয়েছি আজীবন মনে রাখবে। তিনি বলেন, ৫ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে যাবেন, ভারতের সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তিসহ অনেক চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন। ভারতের সাথে কী চুক্তি হবে, দেশবিক্রির চুক্তি? সফরে যাওয়ার আগে কী চুক্তি হবে; তা জনগণকে জানাতে হবে।

তিনি বলেন, ভারতের সাথে কোন চুক্তি দেশবাসী মানবে না। তিনি বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য সরকারের বক্তব্য। কাজেই দেশদ্রোহী সরকার এক মুহুর্তও ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। তিনি বলেন, দেশ সকলের; এদেশকে রক্ষা করতে হবে। দেশ নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, প্রহসনের নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। জাতীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন হতে হবে। তিনি নির্লজ্জ সরকারকে পদত্যাগ করে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ভারতের অনেক নাগরিক বাংলাদেশে চাকুরী করে, অথচ বাংলাদেশের লাখ লাখ যুবক বেকার। এভাবে ভারতের তাঁবেদারি করে সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়।

তিনি চা শ্রমিকদের সম্পর্কে বলেন, চা শ্রমিকরা দীর্ঘদিন যাবৎ তাদের মজুরি বৃদ্ধির দাবি করে আসছে। ১২০ টাকা মজুরী হয়? দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়, আর চা শ্রমিকরা তাদের ৩০০ টাকা মজুরি দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করে, এটা সরকারের জন্য লজ্জাজনক। তিনি চা শ্রমিকদের দাবি মেনে নেয়ার আহ্বান জানান।

সার ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইউরিয়া সারের মূল্য প্রতি কেজিতে ৭ টাকা বৃদ্ধি, ডিজেলের মূল্য আকাশচুম্বী করে কৃষকদেরকে কৃষি পণ্য উৎপাদন করতে উৎসাহমূলক বক্তব্য কৃষকদের সাথে তামাশা ছাড়া কিছুই না। দ্রব্যমূল্যের কষাঘাতে জনগণের জীবন শেষ। সরকার দলের ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে জনগণকে শোষণ করছে।

মুফতী ফয়জুল করীম আরও বলেন, আমার দেশের ট্রানজিট সুবিধা তাদেরকে প্রদান করেছেন অথচ দৃশ্যমান কিছুই আদায় করতে পারেননি। এভাবে একটা দেশকে ধ্বংস হতে দেয়া যায় না। ভারতের আশীর্বাদে ক্ষমতা দখল করে রাখার স্বপ্ন জনগণ দুঃস্বপ্নে পরিণত করবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দলের মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনুছ আহমদ বলেন, দেশবিরোধী শক্তি আজ আওয়ামী সরকারের মাথা খেয়ে ফেলেছে। সরকার নিজেদেরকে স্বাধীন রাখতে ব্যর্থ হয়ে দেশটাকেও বিকিয়ে দিচ্ছে। মন্ত্রী-এমপিদের অসংলগ্ন কথাবার্তা এটাই বুঝিয়ে দিচ্ছে। তিনি বলেন, দেশ চোরদের হাত থেকে এখন ডাকাতদের হাতে চলে গেছে। তিনি বলেন, সরকার দিল্লির ইশারায় সবকিছু করছে।

অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, লাল সবুজের পতাকা এখন দালালদের কবলে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের ব্যাখ্যা প্রধানমন্ত্রীকে দিতে হবে। ইভিএম তথা বাটপারি মেশিনে ভোট করার খায়েশ জনগণ পূরণ করতে দেবে না।

মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, দেশের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। সরকার ২০১৪ ও ২০১৮ সালে ভারতের সহযোগিতায় ক্ষমতায় গেলেও এখন আর ভারতের সহযোগিতায় যেতে পারবে না। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে প্রমাণিত হয়েছে এ সরকারের প্রতি জনগণের সমর্থন নেই। সরকারের দেউলিয়াত্বও ভারত বুঝতে পারছে, এ কারণে ভারত সামনে আর সহযোগিতা করবে না, তা আঁচ করতে পেরেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতের সাহায্য চেয়েছে। আওয়ামী লীগ মেরুদণ্ডহীন সংগঠনে পরিণত হয়েছে।

মাওলানা ইমতিয়াজ আলম বলেন, সরকার নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করতে ব্যর্থ হয়েছে। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার পরও দেশকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করতে পারেনি। ব্যর্থ ও অথর্ব সরকারের পদত্যাগ অনিবার্য হয়ে উঠছে।

সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ বলেন, সরকারের পায়ে নীচে মাটি নেই, জনসমর্থন তলানীতে। এজন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ভারত পাঠিয়ে সরকারকে টিকিয়ে রাখার জোর অনুরোধ করে দেশদ্রোহী কাজ করেছে। তার বিচার হতে হবে। ১৫০ আসনে নির্বাচন কমিশনের ইভিএম-এ ভোট করার স্বপ্নসাধ জনগণ রুঁখে দিবে।