বিদ্যুৎ ও ডিস লাইনের বিলকে কেন্দ্র করে পারিবারিক ঝগড়ার একপর্যায়ে এক ভাইয়ের হাতের ছুরির আঘাতেই আরেক ভাইয়ের মৃত্যুর হয়। ২৫ আগস্ট সকাল ১০ টার দিকে চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলাধীন ২নং সাধানপুর ইউনিয়নের কচুজুম পাহাড়ি এলাকায় ইছাইয়ার বাড়িতে এই ঘটনাটি ঘটে। একটি মহল ঘটনাটির মোড় অন্যদিকে ঘুরানোর চেষ্টা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ তোলেন তাদের পরিবার।
জানা যায়, ইছাইয়ার বড় সন্তান এমদাদ (২৫) তার ছোট ভাই আমজাদ (২৩) এর ছুরিকাঘাতে মৃত্যুর আগে তাদের মাতা আমেনার সাথে কারেন্ট বিল ও ডিস লাইন বিলের বিষয় নিয়ে বাকবিতণ্ডা হয় এমদাদের।
এই বিষয়ে আমেনা বলেন, তার বড় ছেলে এমদাদ মাঝেমধ্যে নেশাদ্রব্য সেবন করত। সকালে আমেনা তার এক আত্মীয়কে হাসপাতালে দেখতে যাওয়ার জন্য বের হওয়ার আগে তার বড় ছেলে নিহত এমদাদকে তার ভাগের বিদ্যুৎ বিল ও ডিস লাইনের বকেয়া পরিশোধের জন্য বলে। এরপর থেকে এমদাদ তার মাতা আমেনাকে গালিগালাজ ও স্ত্রী আকিকে মারধর সহ ঘরের জিনিসপত্র ভাংগার চেষ্টা করে। তখন আমেনা বলে উঠে, “আমাকে কিছু করতে না পেরে বউকে মারধর আর জিনিসপত্র ভাংতেছস কেন?”। এই কথা বলায় এমদাদ তার মায়ের দিকে মারার জন্য এগিয়ে আসতে দেখে আমজাদ গিয়ে সবার চক্ষুর আড়ালে ছুরি মেরে দেয়। পরে এমদাদ রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুঠে পড়লে সাথে চিকিৎসার জন্য মেডিকেলের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানান।
পাশের বাড়ির আসমার মাতা বলেন, প্রতিদিনের ন্যয় ঘটনার দিন সকালে তিনি খাবারের বাজার করার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বেরিয়ে দেখে এমদাদ ঘরের বাহির থেকে গালিগালাজ করতেছে। এই অবস্থা দেখে তিনি আর ঘর থেকে বের হয়নি। তার পরক্ষণে এমদাদকে তার ভাই আমজাদ ছুরি মেরে দিছে শুনে ঘটনাস্থলে যান। এইসময় রক্তাক্ত অবস্থায় এমদাদকে হাসপাতালের নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন বলে তিনি জানান।
খুনি আমজাদের স্ত্রী সোলতানা বলেন, সকালবেলা তার শ্বাশুড়ি আমেনা তার ভাসুর এমদাদকে বিদ্যুৎ বিল ও ডিসলাইনের বকেয়া বিল পরিষোধের কথা বলার সাথে সাথে তার ভাবি আকিকে মারধর শুরু করে দেই তার ভাসুর এমদাদ। পরে তার শ্বাশুড়িকে গালিগালাজ সহ মারধরের চেষ্টা করতে দেখে সোলতানার স্বামী আমজাদ সিড়িতে থাকা ছুরি নিয়ে এমদাদকে মেরে দেয় বলে জানান।
নিহত এমদাদের শাশুর নাজিম উদ্দীন বলেন, নিহত এমদাদ চট্টগ্রাম শহরে চাকুরী করত। চাকুরীতে না যাওয়া সকাল থেকে এমদাদকে মারধর করে। একপর্যায়ে এমদাদ পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তার পিতা ইছাইয়া ধরে থাকলে আমজাদ গিয়ে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। নাজিম উদ্দিনের কাছে ঘটনাস্থলে ছিলেন কিনা এবং তিনি ঘটনাস্থলে অনুপস্থিত থেকে এমন ঘটনা কিভাবে বিস্তার করলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার মেয়ে আকি অর্থাৎ এমদাদের স্ত্রী তাকে বিস্তারিত ঘটনা এই বর্ণনা করে বলে জানান।
এদিকে বিষয়টি নিশ্চিতের জন্য নিহত এমদাদের স্ত্রী আকির কাছে তার পিতার বলা ঘটনাটির সত্যতা জানতে চাইলে তিনি কিছুটা অস্বীকার করে বলেন, সকালে মা আর সন্তানের মধ্যে কারেন্ট বিল ও ডিসলাইন বিলের বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে এমদাদ তার মাতা আমেনাকে গালিগালাজ করলে আমজাদ গিয়ে ছুরি মেরে দেয়। এছাড়াও তার কাছে এইঘটনায় আইনি পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, তার দেবর আমজাদকে আসামী করে হত্যা মামলা রুজু করার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়াও তার কাছ থেকে ঘটনাটির সাথে আমজাদ ছাড়া অন্যকেউ জড়িত আছে বলে মনে করেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, তিনি অন্যকারো জড়িত থাকার বিষয়ে প্রত্যক্ষ করতে পারেননি তাই আমজাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিচ্ছেন বলে জানান।
নিহতের শাশুড়ী ইয়াছমিন আক্তারের কাছে জানতে চাইলে তিনিও আকির দেয়া বক্তব্যের সাথে মিল রেখে বলেন, ঘটনার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে আকির কাছে ঘটনাটি শুনছেন। আর তার মেয়ে আকি যা বলেছে তা তিনি এই প্রতিবেককে বিস্তার করেন।
ঐ এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু ব্যক্তি বলেন, প্রাই সময় এমদাদ নেশাদ্রব্য সেবন করে ঘরে ঝগড়াঝাটি করত। তবে ঘটনারদিন আমজাদ সবার চক্ষুর আড়ালে তাৎক্ষণিক ভাবে ছুরিকাঘাত করে তার বড় ভাই এমদাদকে হত্যা করেন। ঘটনাটিকে অন্যদিকে প্রভাবিত করার উদ্দেশ্য কিছু কুচক্রী মহল ভিন্ন তথ্য ছড়াচ্ছেন বলে জানান তারা।
সাধনপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ বাদশা বলেন, আপন ছোট ভাই আমজাদের ছুরিকাঘাতে গুরতর জখম অবস্থায় এমরানকে হাসপাতালে নেয়ার পথে মৃত্যু ঘটে।
এ ব্যাপারে বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রেজাউল করিম মজুমদার বলেন, সাধনপুর ইউনিয়নের কচুজুম পাহাড়ি এলাকায় ভাইয়ের হাতে ভাই খুনের খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য চমেক হাসপাতালে পাটানো হয়েছে।
Leave a Reply