বৃহস্পতিবার , ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ১৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

বাঁশখালীতে জায়গা জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে সংঘর্ষে নিহত-২

প্রকাশিত হয়েছে-

 

আলমগীর ইসলামাবাদী
চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি

থানায় ঢুকে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করলেন ছাত্রলীগ নেতার!

বাঁশখালীতে জায়গা জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে সংঘর্ষে আবদুল খালেক ও সুলতান মাহমুদ টিপু নামে ২ ব্যক্তি নিহত হয়েছে। এই ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে। ঘটনার জের ধরে থানায় ঢুকে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক রাসেল ইকবাল। গত বুধবার (২০ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বাঁশখালী থানার মূল ফটকে এ ঘটনা ঘটে। বিষপানকালে রাসেলকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করেন বাঁশখালী থানার মূল ফটকে থাকা পুলিশ সদস্যরা।

জানা গেছে, গত বুধবার (২০ অক্টোবর২১) বিকেলে বাঁশখালী উপজেলার শীলকূপ ইউনিয়নের মনছুরিয়া বাজার এলাকায় বসতবাড়ির সীমানায় পানি নিষ্কাশনের পাইপ বসানো নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে আবদুল খালেক (৩০) ও সুলতান মাহমুদ টিপু (২৫) নামে দুই ব্যক্তি নিহত হন। একই ঘটনায় দুই পক্ষের তিনজন আহত হয়েছেন। তাদেরকে প্রথমে বাঁশখালী হাসপাতাল এবং অবস্থার অবনতি হলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
সংঘর্ষে গুরুতর আহতরা হলেন- এক পক্ষের মঞ্জুর আলম (৪০) ও বাহাদূর (৩২) এবং অপর পক্ষের কামাল হোসেন (৫০)। নিহত আবদুল খালেক ও টিপু সুলতান মাহমুদ গুরুতর আহত কামালের পক্ষের লোক। এদিকে এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ জনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতরা হলেন-বাহাদুর (৩২), মনজুর আলম (৪০), রাসেল (২৯), ছিদ্দিক আহমদ (৫২) ও জাকের হোসেন (৩৮)। এর ছিদ্দিক আহমদ হচ্ছেন থানায় ঢুকে বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা চালানো ছাত্রলীগ নেতা রাসেল ইকবালের পিতা।

বাবাকে আটকের পরপরই সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করে থানার উদ্দেশ্যে রওয়া হন রাসেল ইকবাল। গাড়িতে থাকা অবস্থায় ফেসবুক লাইভে আসেন রাসেল। থানায় বিষপানের আগ-মুহুর্ত পর্যন্ত লাইভে যুক্ত ছিলেন তিনি।

এসময় তাকে লাইভে বলতে শোনা যায়, ‘আমার নাম হচ্ছে রাসেল ইকবাল। আমি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সহ- সম্পাদক। আমার বাড়ি বাঁশখালী। চট্টগ্রামের বাঁশখালীর শীলকূপ ইউনিয়নের মনছুরিয়া বাজার এলাকায়। আমি এর আগে থেকেও অনেকবার, তিনবার আমাকে পুলিশের হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। আমার বাবা নিরপরাধ একজন মানুষ। আমিও কোন অপরাধ করি নাই। আমাদের এলাকায় মারামারির ঘটনা ঘটেছে আজকে। ওখানে একজন মানুষ নাকি মারা গেছে। ওই ঘটনায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে, কোন প্রমাণ ছাড়া কালা শুক্কুর ও ডাকাত পাগলা শাহ্ আলমের ছেলে মাহমুদুল ইসলাম, ওরা বিভিন্নভাবে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করে মামলায়। আজকে আমার বাবাকে পুলিশ ধরে নিয়ে আসছে। এসআই হাবিব। এসআই হাবিব সাহেবের উচিত ছিল ওখানে গিয়ে তদন্ত করা, এলাকায় ঘটনাস্থলে গিয়ে সবার তথ্য প্রমাণ নেওয়া। কে ঘটনার সাথে ছিল, কে ছিল না সেটা তদন্ত করা। এবং এই ওসি কামাল সাহেব। উনার সাথে কালা শুক্কুরের ভালো সম্পর্ক। কালা শুক্কুর বলছে, সে জন্য এখন আমার বাবাকে ধরে নিয়ে গেছে। এখন আমাকেও নাকি পুলিশ খুঁজছে।’

‘এখন আমি ভাই, একজন ছাত্রলীগের কর্মী হয়ে যদি আমার এ অবস্থা হয়, আমার পরিবারের যদি এ অবস্থা হয়, তাহলে সাধারণ মানুষ কিভাবে ভালো থাকবে বলেন? এর আগেও আমার বন্ধুর সাথে একটা মেয়ের সম্পর্ক ছিল, এখন আমার বন্ধু আর ঐ মেয়েটা ওরা পালিয়ে বিয়ে করছে। ওই মামলায় কালা শুক্কুর আমাকে ফাঁসায় দিয়েছে। তারপর আমার বন্ধু একজনের কাছ থেকে টাকা পাচ্ছে, এখন আমি যখন রাজনীতি করি, আমাকে ডাকছে। ঐ ছেলেটাকে ডাকছে। আমি কথা বলছি। এখন আমি নাকি তাকে অপহরণ করেছি বলে, তখন ওসি সালাউদ্দিন হীরা ছিল, তারপর এসআই রফিক ছিল, তদন্ত ওসি শরীফ ছিল। উনারা গিয়ে আমার বাবাকে মারতেছে। তারপর সে বাবদ আমার বাবার কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা নিছে। আজকে আমি বেঁচে থাকার মত কোন ইয়া…..দেখছিনা।’

ফেসবুক লাইভের এক পর্যায়ে রাসেল ইকবাল বিষের বোতল হাতে নিয়ে বলেন, আজকে আমি থানার সামনে এগুলা (বিষ) খাবো৷ আমার মৃত্যুর জন্য একমাত্র দায়ী থাকবে, পুলিশ প্রশাসন। যারা আমার বাবাকে ধরে আনছে ওরা আর এলাকার থানার দালালগুলো। আমার জীবনে আমার বাবাকে কখনো কোন মানুষের সাথে অন্যায় করতে দেখি নাই, খারাপ করতে দেখি নাই। আজকে আমি আসছি থানায়।’

সিএনজি অটোরিকশা থেকে বাঁশখালী থানার সামনে নেমে ফেসবুক লাইভের এক পর্যায়ে থানার মূল ফটকে গিয়ে তিনি বলেন,’এখন আমি থানায় আসলাম। আজকে আমি মরবো, না হয় আমার বাবাকে…..।’

ততক্ষণে বিষ মুখে নিয়ে নেন রাসেল ইকবাল। এসময় থানার মূল ফটকে থাকা মহিলা পুলিশ সদস্যরা তাকে থামানোর জন্য চেষ্টা করেন।

বিষ পান করার পরপরই তাকে নিয়ে যাওয়া হয় বাঁশখালী উপজেলা হাসপাতালে। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় সেখান থেকে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে রেফার করা হয়।

বাঁশখালী উপজেলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সঞ্জয় কুমার নাথ বলেন, ‘বিষপান করা রাসেলকে বিকেল ৪টার দিকে নিয়ে আসা হয়েছিল। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।’

রাসেল ইকবালের সাথে চমেকে অবস্থান করা চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মামনুর রহমান চৌধুরী জানান, ‘রাসেল ইকবাল ছাত্রলীগের একজন ত্যাগী কর্মী। রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সে অনেকবার মামলার শিকার হয়েছে। তার ভাষ্য, তার কারণে মা-বাবা অপমানিত হবে কেন? এই বলে সে বিষপান করে। এখন সে চমেকের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে আছে। তার শরীর ওয়াস করা হচ্ছে।’

বাঁশখালী থানার ওসি কামাল উদ্দীন জানান, ‘শীলকূপে বসতবাড়ির সীমানায় পানি নিষ্কাশনের পাইপ বসানো নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষে দু’জন মারা যাওয়ার ঘটনায় আটক দুজনের মধ্যে একজনকে নির্দোষ দাবি করে থানা ফটকে বিষপান করেছেন তার ছেলে রাসেল ইকবাল। রাসেল দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক। তাকে বাঁশখালী উপজেলা হাসপাতালে দেখতে গিয়েছি আমরা। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

ছবি ক্যাপশন, (১), বাঁশখালীতে জায়গা জমির বিরোধে সংঘর্ষে নিহত আবদুল খালেকের লাশ। ইনসেটে আবদুল খালেক ও সুলতান মাহমুদ টিপু।