বুধবার , ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ১৫ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

বাঁশখালীতে র‍্যাবের শ্বাষরুদ্ধকর অভিযানে ১২ জলদস্যু আটকঃ প্রশংসিত র‍্যাব-৭চট্টগ্রাম

প্রকাশিত হয়েছে-

আলমগীর ইসলামাবাদী চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি”

বঙ্গোপসাগরে ১৬ টি ফিশিং বোটে ডাকাতির ঘটনায় র‍্যাব-৭ এর ৪৮ ঘন্টা ব্যাপী পরিচালিত শ্বাষরুদ্ধকর অভিযানে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা থেকে জলদস্যু টীমের মুলহোতা সহ ১২ জলদস্যুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময় তাদের কাঁছ থেকে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র, ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা মূল্যের তিন হাজার ইলিশ মাছ, মাছ ধরার জাল ও ডাকাতিতে ব্যবহৃত নৌকাও জব্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন র‍্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেঃ কঃ এম এ ইউসুপ। গ্রেফতারকৃত জলদস্যুরা হলেন- বাঁশখালী উপজেলার গন্ডামারা ইউনিযনের ৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোহাঃ আনসার মেম্বারের ছেলে মোহাঃ আনোয়ার (মূলহোতা), কবির আহমদের ছেলে লিয়াকত (মাঝি), আব্দুল কাদেরের ছেলে মনির, মৃত জয়নাল আবেদীনের ছেলে আবুল খায়ের (ইঞ্জিন ড্রাইভার), মৃত আব্বাছের ছেলে নবীর হোসেন, মৃত মুক্তার আহমেদের ছেলে নেজামউদ্দিন, আব্দুল কাদেরের ছেলে হুমায়ুন, হাজী আবুল হাসানের ছেলে সাহেদ, আবু তাহেরের ছেলে সাদ্দাম, মো. ইব্রাহিমের ছেলে আতিক, মো. জহিরের ছেলে এমরান ও মৃত ইসলাম মিয়ার ছেলে আমানউল্লাহ।

১০ সেপ্টেম্বর’২২ ইং শনিবার নগরীর চান্দগাঁওস্থ র‌্যাব-৭ এর কোম্পানী কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক কর্নেল এম এ ইউসুফ বলেন, বঙ্গোপসাগরে সম্প্রতি একটি জলদস্যু বাহিনী সক্রিয় হয়ে নতুন করে দস্যুতা শুরু করে এবং গত ২৭ আগস্ট সাগরে ৯টি মাছ ধরার বোটে ডাকাতি হয়। এ বিষয়ে র‌্যাব তদন্ত শুরু করে। এরই মধ্যে আমরা জানতে পারি, জলদস্যু বহনকারী একটি বোট সাগরে বিভিন্ন বোটে ডাকাতি করছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে গভীর সমুদ্রে ও কুতুবদিয়া চ্যানেল হয়ে বাঁশখালীতে গত ৮ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার থেকে ১০ সেপ্টেম্বর শনিবার দুপুর ২টা পর্যন্ত দীর্ঘ ৪৮ ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস অভিযান চালিয়ে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত ১২ জলদস্যুকে বিপুল সংখ্যক দেশিয় অস্ত্র ও মাছসহ গ্রেফতার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত ১টি বোট, ৩ হাজার ইলিশ মাছ, মাছ ধরার বড় জাল, ৩টি ওয়ান শুটারগান, ১টি চাইনিজ কুড়াল, ১৬টি দা-ছুরি, ১টি বাইনোকুলার, ৪টি টর্চ লাইট, ২টি চার্জ লাইট, ২টি হ্যান্ড মাইক, ৭০টি মোবাইল, নগদ ৫ হাজার ৭০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, সাগরে বেশি মাছ না পাওয়ায় বোটের মালিক বাঁশখালী গন্ডামারা ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আনছার তার মাঝি-মাল্লাদের নিয়ে মূলত নব্য জলদস্যু বাহিনী তৈরি করেন। সে নিজেই মূল পরিকল্পনাকারী এবং নিজের ছেলেকে ডাকাত সর্দার বানিয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য অল্প পরিশ্রমে মেশি মুনাফা করা। তারা এখন পর্যন্ত মোট ১৬টি বোট ডাকাতি করেছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়। গ্রেফতারকৃত আনোয়ারের বিরুদ্ধে ৩টি মামলা রয়েছে।

র‌্যাব-৭ আরও জানান, তারা তিনটি গ্রুপ একসাথে কাজ করতো। এ বাহিনীর একটি গ্রুপ আনছার মেম্বারের পরিকল্পনায় পরিচালিত হত, আরেকটি গ্রুপ ডাকাতি করা মাছ আড়তদারদের কাছে তুলনামুলক কমদামে বিক্রি করতো, অপর গ্রুপ বোট ডাকাতির পাশাপাশি জেলেদের জিম্মি করে মুক্তিপন আদায় করতো।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে লেঃ কঃ এম এ ইউসুপ আরো জানান, জলদস্যু দলের মুলহোতা আনছার মেম্বারকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং অচীরেই র‍্যাবের গোয়েন্দা জালে ধরা পরবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। জলদস্যু দলের পিছনে রাজনৈতিক শেল্টার আছে কিনা জানতে চাইলে এম এ ইউসুপ জানান, সরাসরি রাজনৈতিক সংশ্লিষ্ঠতা পাওয়া না গেলেও বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের সংশ্লিষ্ঠতার ইংগিত দেন তিনি। এদিকে উপজেলার সাগর উপকুলীয় গন্ডামারা ইউনিয়নে র‍্যাব-৭ এর ৪৮ ঘন্টা ব্যাপী রুদ্ধশ্বাষ অভিযান এবং ১২ জন জলদস্যু গ্রেফতারে র‍্যাব’কে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি বিষয়টি সারাদিন ধরে সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইর‍্যাল হয়ে জনগনের মুখে মুখে প্রচারিত হয়ে টক অব দ্যা বাঁশখালীতে পরিনত হয়।