শনিবার , ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ১১ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

বাঁশখালীর উপকূলীয় অঞ্চলে লবণ উৎপাদন শুরু-ন্যায্যমূল্য নিয়ে শঙ্কিত লবণ চাষীরা

প্রকাশিত হয়েছে-

আলমগীর ইসলামাবাদীঃ- চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি,

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার উপকূলে পুরোদমে শুরু হয়েছে লবণ উৎপাদনের কাজ। চিংড়ি ঘের গুঁটিয়ে চাষীরা দিনের বেশিরভাগ সময় পার করছেন লবণ উৎপাদনের কাজে। ইতোমধ্যে অনেক জমিতে লবণ উৎপাদন শুরু হয়ে গেছে। অনেকে গত বছরের মজুদ করা লবণ বিক্রি করেননি কাঙ্ক্ষিত মূল্য না পাওয়ায়। তবুও ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার হতাশা নিয়ে চাষীরা চলতি মৌসুমেও লবণ উৎপাদনের কাজ শুরু করেছেন।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার ছনুয়া, শেখেরখীল, পশ্চিম পুঁইছড়ি, চাম্বল ইউনিয়নের ডেপুটিঘোনা, শীলকূপের মনকিচর, সরল, গণ্ডামারা, বাহারছড়া, খানখানাবাদ ইউনিয়নে লবণ মাঠে লবণ উৎপাদনের কাজ চলছে।

কিন্তু ন্যায্যমূল্যে লবণ বিক্রি না হওয়ার ফলে এখানকার চাষীরা লবণ উৎপাদনে দিন দিন আগ্রহ হারাচ্ছেন। এরপরও বাপ-দাদার পেশাকে বাঁচিয়ে রাখতে সকাল থেকে সন্ধ্যা লবণ মাঠ নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চাষীরা।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) সূত্রে জানা যায়, বাঁশখালীতে মোট ৬৫ হাজার একর জায়গায় লবণ উৎপাদন কাজ শুরু হয়েছে।

বাঁশখালীর সরল ইউনিয়নে বিসিকের নিজস্ব তদারকির মাধ্যমে লবণ উৎপাদন ও রপ্তানি করে থাকেন চাষীরা। ইতো মধ্যে বাঁশখালীর উপকূলে উন্নত পদ্ধতিতে সাদা দানাদার ও পরিপক্ব লবণ উৎপাদনে চাষীদেরকে উদ্যােক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে বিসিক।

চাষীরা জানান, বিগত দিনের মতো উপকূলের অনেক আবাদী জমি অনাবাদী হয়ে পড়ে আছে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায়। অপরদিকে লবণের দাম কম হওয়ায় চাষীদের মুখে হাসির ঝলকও দেখা মেলে না। বলতে গেলে চাষীদের নিরব কান্নার সুর বয়ে যাচ্ছে। যদি শেষ পর্যন্ত এই অবস্থা অব্যাহত থাকে তাহলে বাঁশখালীর উপকূলীয় কয়েক সহস্রাধিক লবণ চাষী পরিশ্রমের সুফল না পেয়ে এবারও পথে বসবে। বর্তমানে সরকার লবণ চাষীদের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য বিদেশ থেকে লবণ আমদানী বন্ধ করে দিলেও চাষীরা সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে দাম পাচ্ছেন না।

বাঁশখালীতে এবারও প্রায় লক্ষাধিক লবণ চাষী ন্যায্যমূল্য ও পরিশ্রমের যথাযথ মূল্য পাবে এই আশায় লবণ মাঠে রাতদিন পরিশ্রম করে যাচ্ছে। সরকার যদি বাঁশখালীর উপকূলে উৎপাদিত এসব লবণ দেশের সর্বত্র রপ্তানীতে সহযোগিতা করেন তাহলে এখানকার লবণ চাষীরা আরো বেশি উপকৃত হবে এবং মানসম্মত লবণ উৎপাদনে আরো বেশি মনোযোগী হবেন এমনটি প্রত্যাশা বাঁশখালীর উপকূলীয় জনপদের চাষীদের।

ছনুয়া ইউনিয়নের মধুখালী এলাকার লবণ চাষী আমিনুল হক বলেন, ‘ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে লবণ উৎপাদনের কাজ শুরু করেছি। ৫ কানি জমিতে দৈনিক ৬ জন শ্রমিকের বেতন দিতে হচ্ছে। জানি না লবণ বিক্রির সময় এবছরও গতবছরের মত দূরাবস্থা হবে কিনা। আমরা সরকারের কাছে লবণের ন্যায্যমূল্য চাই।

বাঁশখালী উপজেলা লবণ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আনছুর আলী বলেন, ‘বর্তমানে প্রতি মণ লবণ বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকায়। যা উৎপাদন মূল্যের চেয়ে তুলনামূলক কম।’
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) বাঁশখালী উপজেলা কেন্দ্র প্রধান আনসারুল হক বলেন, ‘সরকার চলতি মৌসুমে দেশে লবণ উৎপাদনে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন করতে একাধিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বিদেশ থেকে যাতে লবণ আমদানি করতে না হয় সে লক্ষ্যে চলতি মৌসুমে ৬০ হাজার একর জমিতে ১৮ লক্ষ মেট্রিক টন পরিশোধিত লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

তিনি। আরও বলেন, ‘কালো লবণ উৎপাদনে লবণ মাঠ ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং লবণের সাথে মিশ্রিত কাদা দ্বারা মিল এলাকার নদ-নদী ক্রমান্বয়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। যা পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। কাজেই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে পলিথিন পদ্ধতিতে সাদা দানাদার ও পরিপক্ক লবণ উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের লবণের চাহিদা পুরণ করার জন্য উদ্যোক্তা ও চাষীদেরকে আমরা প্রশিক্ষণ
দিয়েছিলাম।’