বৃহস্পতিবার , ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ১৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

বাঁশখালীর গন্ডামারা কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে শ্রমিক পুলিশের গুলিতে নিহত-৫, আহত শতাধিক

প্রকাশিত হয়েছে-

নির্বাহী সম্পাদক

বাঁশখালীর গন্ডামারা ইউনিয়নের পশ্চিম বড়ঘোনায় এস আলম কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবী দাওয়া নিয়ে আন্দোলনের জের ধরে এই হামলা এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশের গুলিতে ৫ শ্রমিক নিহত হয়েছে। নিহতরা হলেন- শুভ (২৩), হাফেজ মো. রাহাত (২৪), আহমদ রেজা মিয়াখান (১৯) ও রনি হোসেন (২২)। গুলিবিদ্ধ আরেক শ্রমিক হাবিবুল্লাহ (২৫)কে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম হাসপাতালে নেয়ার পথে মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও শতাধিক শ্রমিক। আশঙ্কাজনক অবস্থায় গুলিবিদ্ধ ৬ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আজ (১৭ এপ্রিল) শনিবার সকাল ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রাম রেন্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার রশিদুল হকসহ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এই ঘটনায় এলাকায় আবারো ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। এর আগে ২০১৬ সালে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প বিরোধী আন্দোলনে এলাকাবাসীর সাথে পুলিশের সংঘর্ষে ৪ গ্রামবাসী নিহত হয়েছিল। তাছাড়া কয়লা প্রকল্পের জমি অধিগ্রহন নিয়ে এলাকাবাসীর সাথে এসআলম গ্রুপ এবং কয়লা প্রকল্পের লোকজনের সাথে বিরোধ, দাঙ্গা হাঙ্গামা অনেকটা লেগেই আছে। স্থানীয় একটি চক্র বার বার প্রকল্পের সাথে স্থানীয়দের বিরোধ লাগিয়ে দিতে কলকাঠি নাড়ছে বলে মনে করেন সাধারণ মানুষ।

আহত শ্রমিকরা জানিয়েছেন, এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন বাঁশখালীর কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিচালনায় ছিল চীনা নাগরিকরা। দীর্ঘদিন ধরে চীনাদের সঙ্গে শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে মতবিরোধ ও অসন্তোষ চলে আসছিল। শ্রমিকরা মুলত: রমজান মাসে কর্ম ঘন্টা ৮ ঘন্টা করা, ইফতারের জন্য সময় বরাদ্দ দেয়া, কর্মী ছাঁটায়ের ১মাস পূর্বে জানিয়ে দেয়া এবং সাথে সাথে সম্পূর্ণ বেতন পরিশোধ করা, বেতন বৃদ্ধির করা এং শুক্রবার এক বেলা কাজ করার দাবী জানিয়ে আসছিল। এ নিয়ে শুক্রবার শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করেন। আজ শনিবার সকাল ১০টায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভেতরে আন্দোলনকারী শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এসময় শ্রমিকদের নিবৃত্ত করতে পুলিশ টিয়ার শেষ ও রাবার বুলেট ছুড়ে। এসময় গুলিতে ঘটনাস্থলে ৪ জন এবং হাসপাতালে নেয়ার পথে আরো একজনসহ ৫ শ্রমিক নিহত হয়। সংঘর্ষ ও গুলিতে শতাধিক শ্রমিক আহত হয়েছে। আহতদের বাঁশখালী সরকারী হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাছাড়া আশঙ্কাজনক অবস্থায় গুলিবিদ্ধ ৬ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। হাসপাকালে নেয়ার পথে হাবিবউল্লাহ নামের এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়।
বাঁশখালী থানার ওসি সফিউল কবির জানান, বাঁশখালীর গন্ডামারা কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিকদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে। ওই সংঘর্ষে ৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এতে পুলিশ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। বর্তমানে এলাকায় র্যাব ও পুলিশের উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে। এলাকা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে ঘটনার পর পরই পুলিশ এবং প্রকল্প কর্মকর্তাদের বেশ কয়েকটি গাড়ি এবং কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প এরিয়ায় আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বিক্ষুদ্ধরা। এতে কয়লা প্রকল্পের বহু স্থাপনা পুড়ে গেছে। এতে কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। অপরদিকে শ্রমিকদের আন্দোলন থেকে গতকাল শুক্রবার ১৫ জন এবং আজ শনিবার ঘটনার পর আরো বেশ কিছু লোককে আটক করা হয়েছে।