বৃহস্পতিবার , ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ১৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

ভাস্কর্য ইস্যু সরকারের জন্য উভয়সঙ্কটে পরিণত? = মাওলানা মামুনুল হক

প্রকাশিত হয়েছে-

মামুনুল হকের প্রতিবেদক

 

ভাস্কর্য ইস্যুটি সরকারের জন্য উভয়সংকটে পরিণত হয়েছে ৷ যেহেতু তারা নিজেরাই ভাস্কর্য ও বঙ্গবন্ধুর সম্মান রক্ষাকে এক ও অভিন্ন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করছে ৷ এর ফলে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য প্রতিষ্ঠা তাদের দলীয় জয়-পরাজয়ের বিষয়ে পরিণত হয়েছে ৷ অপরদিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ভাস্কর্য তথা মূর্তি স্থাপন ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে এমন একটি বিষয় যা মেনে নেওয়ার কোনো অবকাশ নেই ৷ ফলে ধর্মবেত্তা ইসলামী নেতৃত্বের সামনে ভাস্কর্যের বিরোধিতা করা ছাড়া দ্বিতীয় কোনো পথ খোলা নেই ৷ হয়তো তারা রাস্ট্র এবং সরকারের সাথে মুখোমুখি সংঘাতে লিপ্ত হবেন না, কিন্তু এটিকে মেনে নিলে ঈমানী আত্মমর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হওয়া ছাড়া কোনো গত্যন্তর নেই ৷ এমন পরিস্থিতি সরকারের জন্য উভয়সংকট ৷ যদি ক্ষমতার জোরে, প্রশাসনের উপর নির্ভর করে তারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য প্রতিষ্ঠা করে তবে ইসলামপন্থী ও আলেম-ওলামাদের সাথে অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে যতটুকু দূরত্ব ঘুচিয়েছিল বিষয়টি আবার সেই জায়গায় গড়িয়ে যাবে ৷ আলেমসমাজ বিষয়টিকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারবে না ৷ অপরদিকে যদি ভাস্কর্য স্থাপন থেকে পিছিয়ে পড়ে তাহলে দেশী ও আন্তর্জাতিক ইসলামবিদ্বেষীদের রোষানলে পড়তে হবে সরকারকে ৷ তাদের কাছে স্পষ্ট মেসেজ যাবে, সরকার ইসলাম পন্থীদের সামনে নতি স্বীকার করছে ৷ এমন পরিস্থিতিতে ফেলে দেওয়ার মত ঘনিষ্ঠ জায়গাগুলোতে যারা রয়েছে তারাই সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় ক্ষতির কারণ ৷ একটি স্থিতিশীল পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করার জন্য, দেশের মধ্যে একটি সংঘাতমূলক পরিবেশ তৈরি করার জন্য তারাই দায়ী ৷
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার নেতৃত্ব ও অবদানের মাধ্যমে এমন এক আসনে আসীন হয়েছেন যে, তার চেতনা ও কৃতিত্ব তুলে ধরার জন্য ভাস্কর্য নির্মাণের প্রয়োজন নেই ৷ এমন পরিস্থিতির দিকে একটি পক্ষকে ঠেলে দেয়া মূলত চাটুকার শ্রেণীর কাজ ৷

চাটুকারশ্রেণীর মধ্যে নিকৃষ্টতম শ্রেণী হলো তারা যারা সরকারকে খুশি করার জন্য ভাস্কর্যের অনুকূলে কুরআন-সুন্নাহ থেকে কিছু উদ্ধৃতি সরবরাহ করছে ৷ কুরআন- সুন্নাহর ন্যূনতম জ্ঞান যাদের আছে তারা একথা বিশ্বাস করবে যে,ভাস্কর্য তথা মূর্তি নির্মাণের কোন অবকাশ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আনীত ধর্মের মধ্যে নেই ৷ যে নবীর অন্যতম প্রধান মিশন ছিল মূর্তি নির্মূল করা, যে কুরআনের অন্যতম মৌলিক শিক্ষা হলো মূর্তিকে উৎখাত করা, সেই নবীর আদর্শ ও সেই কুরআনের উদ্ধৃতিতে মূর্তির বৈধতা প্রমাণ করতে যাওয়া কত বড় ধৃষ্টতা, তা কুরআন-সুন্নাহ সম্পর্কে অবগত যে কেউই অনুমান করতে পারে ৷ সরকারকে যারা এই ধরনের ধৃষ্টতার কানপড়া দিচ্ছে তাদেরকে বলা হয় ওলামায়ে ছু-নিকৃষ্টতম আলেম ৷ এক্ষেত্রে সরকারের নিকট গ্রহণযোগ্য ও আস্থাভাজন হাক্কানী আলেমদের বড় দায়িত্ব ৷ তাদের দায়িত্ব, সরকারের সম্মুখে বিষয়টি খোলাসা করা ৷ মূর্তি নির্মাণ বিষয়ে ইসলামের কঠোর দৃষ্টিভঙ্গির কথা বোঝানো ৷ অন্তত একথা তো বোঝাতেই হবে যে, ভাস্কর্য তথা মূর্তি নির্মাণ ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যন্ত গর্হিত একটি কাজ তার ওপর সেটিকে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে বৈধ প্রমাণের চেষ্টা “চুরির উপর সিনাজুরি” বৈ কিছুই নয় ৷
তবে সবার আগে সম্মিলিতভাবে সকল মাসলাক- মাশরাবের আলেম সমাজের ঐক্যবদ্ধ একটি মতামত জাতির সামনে আসা উচিত ৷ সরকারকেও জানানো উচিত ৷ আশা করি আলেমসমাজ সেই পদক্ষেপ নিবেন এবং এই আশাও আমরা ছাড়ছিনা যে, সরকারের বোধোদয় হবে এবং তারা এই আত্মঘাতী পথ থেকে যেকোন মূল্যে পিছু হটবে ৷

সৌজন্যে:
মাসিক রাহমানী পয়গাম
নভেম্বর’২০