শুক্রবার , ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ১৭ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

মানববন্ধনে শত শত মানুষের অভিযোগ, স্কুলছাত্র নাহিফুল হত্যাকারীদের বাঁচাতে চাইছে পুলিশ

প্রকাশিত হয়েছে-

শরিফা বেগম শিউলীঃ- স্টাফ রিপোর্টার,

রংপুরের পীরগঞ্জে ষষ্ঠশ্রেণির ছাত্র নাহিফুল হত্যা ও গুমের সঙ্গে জড়িতদের পুলিশ রক্ষার চেষ্টা করছে অভিযোগ করে নিহত স্কুলছাত্রের গ্রাম চৈত্রকোলে শত শত নারী-পুরুষ সোমবার দুপুরে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা উন্মোচনের মাধ্যমে জড়িত সকলের কঠোর শাস্তির দাবিতে এই মানববন্ধন করেন তারা।

ভূক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, হত্যার পর ৪ দিন ধরে নাহিফুলের লাশ গুমের জন্য বিভিন্ন স্থানে নিয়ে অবশেষে নিজের বাড়ির একটি গভীর নলকূপের ঘরে পুঁতে রাখা হয়। এই অপরাধে সামিউল নামে ১২ বছরের আরেকটি ছেলেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সে একা একাজ করতে পারে না বলে সবাই বিশ্বাস করলেও পুলিশ অন্যদের বাঁচাতে সামিউলকে একমাত্র আসামী করে দ্রুত চার্জশিট দিয়ে অন্যদের বাঁচাতে চাইছে বলে অভিযোগ করছেন তারা।

মামলায় অন্যদের আসামী করতে পুলিশ বাঁধা দিয়েছে এমনকী রক্তমাখা বস্তাসহ বিভিন্ন আলামত নিয়ে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশের বিরুদ্ধে আলামত হিসেবে সেসব গ্রহণ না করার অভিযোগ তাদের। লাশের সঙ্গে একটি মোবাইলফোন পাওয়া গেছে, সেই মোবাইলটি কার সেকথাও পুলিশ গোপন করছে বলে অভিযোগ করছেন নাহিফুলের বাবা-মাসহ তার পরিবার।
গত ২৩ এপ্রিল নাহিফুল ইসলামকে প্রতিবেশী আব্দুস সালামের ছেলে সামিউল ইসলাম বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। সেদিন থেকেই নাহিফুল নিখোঁজ ছিল। ২৬ এপ্রিল রাতে সামিউলকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী ২৭ এপ্রিল ভোরে উপজেলার চৈত্রকোলের পালগড়গ্রামে একটি গভীর নলকূপের ঘরের মাটি খুঁড়ে নাফিউলের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। স্কুলছাত্র নাহিফুল হত্যা ও গুমের অভিযোগে গ্রেফতার সামিউলকে বুধবার (২৭ এপ্রিল) আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। ঐদিন নিহত নাফিউলের ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তরও করা হয়। আদালতে হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষক বর্ণনা দেন সামিউল।
পুলিশ জানায়, নিখোঁজ হওয়ার দিন নাহিফুল ও সামিউল পালগড় মাদরাসায় গিয়ে গল্পগুজব করে। এরপর তারা দুজন মিলে কলোনি বাজারে যায় এবং খিচুড়ি খায়। খিচুড়ি বিল দেওয়ার সময় নাহিফুলের মানি ব্যাগে অনেক টাকা দেখে সামিউল। টাকা দেখে তা কেড়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করে। রাত ১১টার দিকে নাহিফুলকে তার শ্যালো মেশিন ঘরে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে সে কৌশলে নাহিফুলকে চেতনানাশক খাইয়ে অজ্ঞান করে।
সামিউল জানায়, এরপর সে ঘরে থাকা ফিতা দিয়ে নাহিফুলের গলায় পেঁচিয়ে ধরে শ্বাসরোধে হত্যা করে তার পকেটে থাকা ৮৯০ টাকা ও হাতঘড়ি লুট করে নেয়। এরপর শ্যালো মেশিনের কোদাল দিয়ে গর্ত করে এবং মরদেহ গর্তের মধ্যে পুঁতে রাখে। পরে মাটি চাপা দিয়ে সে হাত মুখ ধুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। সকাল ৮টার দিকে সে বাসায় ফিরে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে থাকে।
পরে পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ সামিউলকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে নাহিফুল হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দেয়। সামিউলের তথ্যর ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাতে তার নিজের বাড়ির অগভীর নলকূপ ঘরের মেঝেতে পুঁতে রাখা নাহিফুলের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত তৌহিদুল ইসলাম উপজেলার শাল্টি পশ্চিমপাড়ার নুর আলমের ছেলে। সে স্থানীয় শাল্টি শমস দীঘি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।


এ ব্যাপারে ভেন্ডাবাড়ী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, প্রকৃত হত্যাকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রমেক (রংপুর মেডিকেল কলেজ) হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছিল। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।##