বৃহস্পতিবার , ১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

মালিকানা বা দখলীয় স্বত্বীয় স্থাবর সম্পত্তি হইতে বেদখল হইলে আইনগত করণীয় ও প্রতিকার

প্রকাশিত হয়েছে-

ইমরান তাওহীদ রানাঈদগাঁও,

সমসাময়িক সময়ে নিজ মালিকানা স্বত্বীয় বা দখল স্বত্তীয় স্থাবর সম্পত্তি হইতে বেদখল নিত্য নৈমন্তিক ঘটনা মাত্র। রোজ পত্রিকার পাতায় চোখ রাখলেই এহেন প্রভাবশালী ও অবৈধ দখলকার কর্তৃক দুর্বল ও কুঠির জোরহীন ব্যক্তিদের নিজস্ব মালিকানা স্বত্বীয় (Possessory Ownership) ও দখলি স্বত্বীয় (Possessory title) স্থাবর সম্পত্তি হইতে অবৈধভাবে বেদখল করার স্থিরচিত্র দৃশ্যমান হয়।

কোন নাগরিক এহেন ঘটনায় পতিত হলে থানায় মামলা করতে চায়, কেহ আবার স্থানীয় থানা পুলিশ মারফত দখল পুনরুদ্ধার করে নিতে চাই। এহেন পরিস্থিতিতে অনেক নাগরিক প্রকৃত করণীয় বিষয়ে না জানার ফলে উক্তরূপ সমস্যাটির আরও দীর্ঘসূত্রিত হয়। প্রকৃত সত্য যে, প্রকৃত মালিক বা দখলকার ব্যক্তি অবৈধভাবে বেদখল বা দখলচ্যুত হইতে উক্ত দখল পুনরুদ্ধারের জন্য দুই ধরনের উদ্যোগ গ্রহন করে প্রতিকার চাইতে হবে।
প্রথমত, স্থানীয় সালিশ বিচার মারফ (এহেন সালিশ বিচার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য কর্তৃক বা যে সব অঞ্চলে সালিশী প্রথা বিজ্ঞ জনের নেতৃত্বে পরিচালিত হয় সে সব ক্ষেত্রে গ্রাম/মহল্লার প্রধান কর্তৃকও) তবে স্থানীয় সালিশ বিচার মানতে কোন নাগরিককে বাধ্য করা যাবে না। দ্বিতীয়ত, দেওয়ানী/ ফৌজদারী আদালতে মামলা দায়ের করণের মাধ্যমে ফৌজদারী মামলা দায়ের এবং প্রতিকার ঃ কোন ব্যক্তি তার সম্পত্তি থেকে বেদখল হওয়ার ০২(দুই) মাসের মধ্যে একজন বিজ্ঞ আইনজীবীর মাধ্যমে ফৌজদারী কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ১৪৪ অথবা ১৪৫ ধারার বিধান অনুসারে এম.আর মামলা রুজু করতে পারবেন। উক্ত মামলা দায়ের পরবর্তী বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মামলার গুণাগুণ বিবেচনা করতঃ প্রতিপক্ষকে কারণ কারণ দর্শাতে পারেন অথবা তপশীলোক্ত সম্পত্তিতে প্রবেশ নিবৃত্ত করার জন্য প্রতিপক্ষকে বারিত (নিষেধাজ্ঞা) ও করতে পারেন অথবা স্থানীয় ইউনিয়ন (ভূমি) অফিস ও অন্যান্য মারফত তপশীলোক্ত সম্পত্তি সংক্রান্তে প্রকৃত দখলকার বিষয়ে “তদন্ত প্রতিবেদন” ও তলব করতে পারেন অথবা মামলাটি দায়েরের ১ম দিনই নথিজাত (খারিজ) করতে পারেন। ম্যাজিষ্ট্রেট যদি প্রকৃত দখলকার বিষয়ে “তদন্ত প্রতিবেদন” তলব করে থাকে, সেক্ষেত্রে “তদন্ত প্রতিবেদন” আসলে উক্ত “তদন্ত প্রতিবেদনের” আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন, যেমন পূর্ববর্তী ০২ (দুই) মাসের মধ্যে যদি কোন পক্ষ জোরপূর্বক বেদখল হয়ে থাকেন, তাকে ঔই সম্পত্তির দখলকার হিসেবে বিবেচনা করার উদ্যোগ নিবেন। দেওয়ানী আইনের ডিক্রির মাধ্যমে আইন সঙ্গতভাবে উচ্ছেদ না হওয়া পর্যন্ত দখলে থাকা পক্ষ দখল বহাল রাখবে মর্মে ম্যাজিষ্ট্রেট আদেশ দেবেন। এধরনের মামলা খুবই কম সময়ের মধ্যেই নিষ্পত্তি হয়ে থাকে। দেওয়ানী মামলা দায়ের এবং প্রতিকার ঃ তৎসংক্রান্তে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনে ১৮৮৭ এর ধারা ৮, ৯ এবং ৪২ ধারায় মামলা দায়ের করা যাবে। সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৯ ধারার মর্ম কথা হলো বেদখল অর্থ প্রকৃত উচ্ছেদ বা তাড়ানো অর্থাৎ যে ব্যক্তি প্রকৃত দখলে ছিল তাকে দখল থেকে উচ্ছেদ করাই হলো বেদখল। এই ধারায় মামলা দায়ের ক্ষেত্রে ১টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো শুধুমাত্র বাদীর পূর্ববর্তী দখলের উপর ভিত্তি করে মোকদ্দমা দায়ের করা যায় সে ক্ষেত্রে বাদীর সম্মতি ছাড়া এবং আইনগত পন্থা ব্যতীত তাকে দখলচ্যুত করা হয়েছে। এই ধারায় মামলা দায়ের পরবর্তীতে বিজ্ঞ আদালতের বিচারক ০২ (দুইটি) বিবেচ্য বিষয় বিবেচনা করবে একটি বাদী দখলচ্যুত হওয়ার পূর্বে দখলে ছিল কিনা? অপরটি, মোকদ্দমা দায়েরের পূর্বের ০৬ (ছয়) মাসের মধ্যে বিবাদী বাদীকে সম্মতি (Consent ) ব্যতিরেখে এবং আইনগত পন্থা ছাড়া দখলচ্যুত করেছে কিনা? যদি এ দু’টি বিবেচ্য বিষয়ের উত্তর ইতিবাচক হয় তাহলে আদালত বাদীকে ৯ ধারায় দখল অর্পণ করবে।

৯ ধারার মামলার বাদী যদি সম্পত্তিতে নিজের স্বত্ব (মালিকানা) প্রমানে সমর্থ নাও হন কেবল বেদখল হওয়ার আগ পর্যন্ত দখলে থাকা প্রমান করতে পারেন তবেই তিনি তার পক্ষে ৯ ধারার ডিক্রি পেতে পারেন আলোচনাকৃত ৯ ধারায় মামলা না করেও সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৮ এবং তৎসহ ৪২ ধারায় ও মামলা দায়ের করার ও সুযোগ রহিয়াছে। সুনির্দিষ্ট স্থাবর সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য ৮ ধারায় ২টি ক্ষেত্রে মামলা দায়ের করা যায়, প্রথমটিঃ মালিক কর্তৃক স্বত্বের উপর ভিত্তি করে, অপরটি দখলী স্বত্বের উপর ভিত্তি করে অর্থাৎ ৮ ধারায় মামলায় বিজ্ঞ আদালতকে আপনার দেখাতে হবে যে, আপনার মালিকানা স্বত্ব (Title By Ownership ) ও দখলি স্বত্বীয় (Possessory Title) স্থাবর উভয় রহিয়াছে।

এই কারণে ১২ (বার) বৎসরের মধ্যে মামলা দায়ের করা যাইবে। ৪২ ধারার মামলা ঃ- আইনানুগ পরিচয় কিংবা কোন সম্পত্তির স্বত্বের অধিকারী কোন ব্যক্তি এমন যে কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা রুজু করতে পারে, যে ব্যক্তি পূর্বোক্ত ব্যক্তির মর্যাদা/ অধিকারের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। জ্ঞাতব্য বিষয় যে, যেখানে কেবল স্বত্বের ঘোষণা ছাড়াও আরও প্রতিকার দাবি করা যেত, কিন্তু বাদী তা করা থেকে বিরত থাকে, সেখানে আদালত শুধু ঘোষণা প্রদান করবে না।

ইতিকথা- সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৮, ৯, ৪২ ধারায় দায়েরকৃত মামলায় তপশীলোক্ত সম্পত্তি বিবাদী কর্তৃক হস্তান্তর বা জমিটি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা বিদ্যমান থাকলে সেক্ষেত্রে বাদী কিংবা বিবাদী অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা ( Ad-interim injunction ) চাইতে পারবে। বিজ্ঞ আদালত উক্ত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার দরখাস্ত পাওয়ার পর মামলার গুণাগুণ বিবেচনা করতঃ অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর অথবা নামঞ্জুর করতে পারবে। সম্প্রতি ‘‘দলিল যার স্বত্ব তার” এমন কথিত বক্তব্য শ্রবন করা যাচ্ছে। ইহা বাস্তবে আইনে রূপান্তর করণ আকাশচুম্বী কল্পনা মাত্র।

লেখকও কলামিস্ট,
মোবারক হোসাইন সাঈদ,
এডভোকেট,
জেলা ও দায়রা জজ আদালত ,কক্সবাজার