শুক্রবার , ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

যশোরের শার্শা উপজেলায় কৃষকদের যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘা, নেই বৃষ্টির দেখা, সার ও ডিজেলের দাম দ্বিগুণ

প্রকাশিত হয়েছে-

যশোর ডেস্ক ঃ-

যশোরের শার্শা উপজেলায় চলতি৷ বছরে রোপা আমন মৌসুমে অনাবৃষ্টির কারণে গত মৌসুমের তুলনায় সেচ খরচ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। অপরদিকে সার-ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধিতে দিশেহারা যশোরের শার্শা উপজেলার আমন চাষিরা। এ যেন কৃষকের মরার ওপর খাঁড়ার ঘা।হঠাৎ করে ডিজেল ও সারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার ৬২ হাজার ৬৫০ জন কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। এদের মধ্যে কৃষক ৬০ হাজার ৭৬০ জন ও কৃষাণী ১৮৯০ জন। এসব কৃষক-কৃষাণী আগামী দিনে কীভাবে আবাদ করবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। চলতি আমন এবং সামনের শীত মৌসুমে সবজির আবাদ হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা অনেক কৃষক-কৃষাণীর।শার্শা কৃষি অফিস থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, শার্শা উপজেলায় গভীর নলকূপ বিদ্যুৎচালিত ৩৯০টি, ডিজেল চালিত ২৫টি, অগভীর নলকূপ সৌর বিদ্যুৎচালিত ৫টি, ডিজেল চালিত ১১ হাজার ৯৩৫টি ও ডিজেলচালিত পাওয়ার পাম্প ৫টি রয়েছে। এসব নলকূপের আওতায় মোট ফসলি জমির পরিমাণ ৬৬ হাজার ৮৬৪ হেক্টর। চলতি আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা ২০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে নির্ধারণ করা হয়েছিল যা ছাড়িয়ে আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় এবার সার ও ডিজেলের দাম বৃদ্ধিতে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে।চলতি আমন মৌসুমে চাহিদামতো বৃষ্টি না হওয়ায় যশোরের কৃষকরা শেষ পর্যন্ত স্যালোমেশিনের ওপর নির্ভর করছেন। অধিকাংশ জায়গায় সেচের পানি দিয়ে আমন ধান রোপণ শুরু করেছেন তারা। আর যখন আমন চাষ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন ঠিক সেই সময় বেড়েছে ডিজেল ও সারের দাম। আর এ কারণেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন তারা।
আমন চাষের পাশাপাশি আরও বেশি দুশ্চিন্তা ভর করেছে শীতকালীন সবজি চাষিদের মধ্যে। কারণ শীতকালে সবজি চাষ সম্পূর্ণ সেচের ওপর নির্ভর করে করতে হয়। যেভাবে ডিজেলের দাম বেড়েছে তাতে সবজি চাষে কয়েকগুণ খরচ বেড়ে যাবে বলে চাষিরা মনে করছেন। ব্যাপকভাবে খরচ করে উৎপাাদিত সবজি কাঙ্ক্ষিত দামে বিক্রি করতে পারবেন কিনা অগ্রীম সেই হিসাব কষছেন চাষিরা।বর্তমানে বৃষ্টির যে অবস্থা সেইসঙ্গে ডিজেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অনেক কৃষক এরই মধ্যে আবাদ করা নিয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছেন।
তবে কৃষি অফিস বলছে, ডিজেলের দাম বৃদ্ধিতে কৃষিতে কিছুটা হলেও প্রভাব পড়বে। একইভাবে পণ্যেরও দাম বাড়বে। এভাবে কৃষক সমন্বয় করে নিতে পারবেন।তাছাড়া সরকার নানাভাবে কৃষককে প্রণোদনা দিচ্ছে। এ কারণে কৃষক-কৃষাণী ক্ষতিগ্রস্ত হয়তো হবেন না। তারা পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে মন্তব্য তাদের।উপজেলার নিজামপুর ইউনিয়নের ছোট নিজামপুর গ্রামের কৃষক ইমামুল হক জানান, সার ও ডিজেলের দাম বৃদ্ধির ফলে চাষাবাদে খরচও বেড়েছে। আবার অনাবৃষ্টির কারণে জমিতে খরা সৃষ্টি হচ্ছে। আমন চাষ অন্যবার জমিতে বাড়তি খরচ ও কম সেচে হলেও এবার তা সম্ভব না। ফলে সেচের জন্য বাড়তি খরচ হচ্ছে। সে হিসাবে ধানের উৎপাদন খরচই উঠবে নাকি বলা যাচ্ছে না।ডিহি ইউনিয়নের তেবাড়িয়া গ্রামের কৃষক শামছুর রহমান জানান, খেয়ে পরে বাঁচার তাগিদে ডিজেল ও সারের বাড়তি দাম মাথায় নিয়ে চাষাবাদ করছি। আর ভরা মৌসুমে বৃষ্টি না থাকায় জমিতে সেচ দিয়ে পানি দিতে হচ্ছে। এতে খরচও হচ্ছে বেশি। এমন অবস্থা থাকলে চাষিদের পক্ষে চাষাবাদ চালিয়ে যাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়বে।আনোয়ারা বেগম নামে একজন কৃষাণী বলেন, স্যালোমেশিনের ওপর নির্ভর করে বোরো এবং সবজির আবাদ করা লাগে। এ বছর আমনেও সেচ দিতে হচ্ছে। এই অবস্থায় ডিজেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আবাদ করা কঠিন হয়ে পড়বে।এ বিষয়ে শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ মন্ডল বলেন, সার ও ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে কৃষকের চাষাবাদে উৎপাদন খরচও বেড়ে যাচ্ছে। উপজেলায় ২০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে।
তিনি বলেন, উপজেলার অধিকাংশ জমি বিদ্যুৎচালিত মেশিনের মাধ্যমে সেচ ব্যবস্থার আওতায়। যার ফলে সেচ ব্যবস্থায় এই উপজেলায় তেমন প্রভাব পড়বে না। তবে যেহেতু সার-ডিজেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে চাষিদের উৎপাদন চলমান রাখতে সরকারের কাছে প্রণোদনার জন্য আবেদন করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলায় পর্যাপ্ত সার মজুত আছে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।
তবে চাষিদের অভিযোগ আমরা তো মনে হয় তো করতেই পারবো না, কিন্তু আমাদের আসল পাবো কিনা তা নিয়েও চিন্তায় আছি। সরকার যেন আমাদের অর্থনীতির দিকে একটু নজর দেন। তবে হয়তো লোকসানের পরিমাণ কমবে।