রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৮ নং ওয়ার্ডের ফলাফল নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগে মানববন্ধন সমাবেশ ও নির্বাচন কমিশনের কার্য্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করে ওই ওয়ার্ডের সাধারণ ভোটাররা। বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর কাচারী বাজার জিরো পয়েন্টে মানব্বন্ধন শেষে জেলা প্রশাসক ও নির্বাচন কমিশন বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে বিক্ষোভকারীরা।
এসময় প্রতিপক্ষের প্ররোচনায় ভোট গননাকালে ঐ কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার হাছিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ করেন তারা।ভোট চুরি করে নির্বাচন কর্মকর্তা, দোষ কেন হয় সরকারের ? পূনরায় ভোট পুণগণনা চায় পায়রাবন্দ ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে সদস্য পদপ্রার্থী ও এলাকাবাসী। গত ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৩ নম্বর পায়রাবন্দ ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে সদস্য পদপ্রার্থী হিসাবে বৈদ্যুতিক পাখা প্রতিক নিয়ে প্রতিদ্বন্দীতা করেন। বিগত টানা দুই মেয়াতে বিপুল ভোটে নির্বাচিত সদস্য আব্দুস সালাম। দিনভর সেখানে অত্যন্ত সুন্দর ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোটাররা ভোট প্রদান করেন। কিন্তু ভোট গণনাকালে উক্ত কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার ও মিঠাপুকুর মহাবিদ্যালয়ের প্রভাষক হাসিবুর রহমান অপর প্রতিদ্বন্দী মোরগ প্রতিক নিয়ে প্রতিদ্বন্দীতাকারী বাদশা মিয়ার প্রোরোচনায় ভোট গণনা প্রক্রিয়ায় কৌশলে বহিরাগত দুইজন লোককে সংযুক্ত করেন।
বিষয়টি নিয়ে সকল প্রার্থী ও ভোটাররা প্রতিবাদ করলেও কারও কথা শোনেননি প্রিজাইডিং কর্মকর্তা হাছিবুর রহমান। এনিয়ে উপস্থিত ভোটারদের তীব্র প্রতিবাদের মুখে ভোট গণনা কক্ষ থেকে আব্দুস ছালামের পোলিং এজেন্ট মো নুরুল ইসলামকে বের করে দিয়ে নামাজের বিরতি দিয়ে ভোট গণনা বন্ধ রাখা হয়। ওই পর্যন্ত আব্দুস ছালামের বৈদ্যুতিক পাখা প্রতিকের প্রাপ্তভোট ছিলো ৮০২টি।
পরে আবার বৈদ্যুতিক পাখা প্রতিকের পোলিং এজেন্ট নূরুল ইসলামসহ অন্যান্যদের ভেতরে নিয়ে ভোট গণনার নামে প্রহসন করে মোরগ প্রতিকের প্রার্থী বাদশা মিয়াকে ৬১৮ ভোট দেখিয়ে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। সেখানে বৈদ্যুতিক পাখার প্রাপ্ত ভোট দেখানো হয়েছে ৬০২টি, তালা প্রতিক নিয়ে প্রতিদ্বন্দীতাকারী আইয়ুব আলীকে ৪৭৭ ভোট এবং ফুটবল প্রতিক নিয়ে প্রতিদ্বন্দীতাকারী আব্দুস সামাদকে ৮৭ ভোট দেখানো হয়। বাতিল ভোট দেখানো হয় ৯৬টি। বাতিল ব্যালোট পেপারের মধ্য ৮২টিতে বৈদ্যুতিক পাখায় সিল ছিলো। ব্যালোট পেপারগুলোর সিংহভাগ কলম দ্বারা ফুটো করা ছিলো। আর কিছু ছিলো ডাবল সিল। ব্যালোট পেপারগুলো কোন এক সময় ফুটো করা বা দ্বিতীয়বার সিল মারা হয়েছে বলে সহযেই প্রতিয়মান হয়।
কারচুপির মাধ্যমে ওই দিন রাত ৯টার দিকে ঘোষিত ফলাফল এলাকাবাসী না মানায় ভোটকেন্দ্র ঘেরাও করে রাখে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ এসে ভোট পুণগননার আশ্বাস দিয়ে পিজাইডিং অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে যায়। পর দিন ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও রির্টার্নিং অফিসারের বরাবর ভোট পুণগণনার আবেদন জানিয়ে দরখাস্ত করেন আব্দুস ছালাম। কিন্তু মিঠাপুকুর উপজেলা রিটার্নিং কর্মকতা সোয়েব সিদ্দিকী তাকে বলেছেন, এসবের বিচার বাংলাদেশে হয় না।
আপনি সুইজারল্যান্ডে যান। এভাবে সকলের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোন প্রতিকার পায়নি আব্দুস ছালাম ও তার ভোটাররা। পরবর্তীতে আব্দুস ছালাম ২০ ও ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২২ সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বরাবর আবার আবেদন করেন।
কিন্তু পূর্বপরিকল্পিত ভাবে ভোটারদের রায় চুরি করে তৃতীয় অবস্থানে থাকা একজনকে বিজয়ী করা হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়, ভোট প্রদান চলাকালে আগেই সকল প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের কাছ থেকে ফলাফল সীটে স্বাক্ষর নেয়া হয়। যার স্বীকারোক্তি সেদিন পোলিং এজেন্ট হিসাবে দায়িত্বপালনকারী সকলেই দিয়েছেন। যা ভোট গণনা শেষে নেয়ার নিয়ম। মোরগ প্রতিকের প্রার্থী বাদশা মিয়ার পোলিং এজেন্টসহ সকলের স্বীকারোক্তির ভিডিও/অডিও আমাদের কাছে সংরক্ষিত আছে।
আমরা সকলেই অবগত আছি, ভোটের কয়েক দিন আগে মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল হান্নানের ঘুষ গ্রহণের একটি অডিও ফাঁস হয়। সেখানে দূর্নীতিবাজ নির্বাচন কর্মকর্তা হান্নান সাড়ে ৪ লাখ টাকায় একজন ইউপি সদস্য প্রার্থীকে জিতিয়ে দেয়ার চুক্তি করেন। এজন্য তাকে আগেই ৩শ ব্যালোট পেপার সরবরাহ করারও প্রতিশ্রুতি দেন আব্দুল হান্নান।
আমরা অন্যায় বা বেআইনি কোন দাবি উত্থাপন করছি না। ২০০৯ ইউনিয়ন পরিষদ আইনে ৫৩ থেকে ৬৮ ধারায় ভোট পুণগণনার বিধান আছে। তারপরও কেন আমাদের আবেদন নিবেদন শোনা হচ্ছে না তা বোধগম্য নয়। এমতাবস্থায় আগামী ৩ দিনের মধ্য ভোট পুণগণনার ব্যাবস্থা করা না হলে পায়রাবন্দের সকল জনগণ কঠোর থেকে কঠোরতম কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।
কোন অবস্থায় নির্বাচনী কর্মকর্তাদের সহায্য-সহযোগীতায় রায় পরিবর্তনের এই জঘন্যতম অপরাধ মেনে নেবে না সাধারণ ভোটাররা।
Leave a Reply