শুক্রবার , ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ১৭ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

রাঙ্গুনিয়ায় বৌদ্ধ ভান্তের বিরুদ্ধে আইসিটি এ্যাক্টে দুই মামলা

প্রকাশিত হয়েছে-

আলমগীর ইসলামাবাদী
চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি

প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি ও আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া এবং রাঙ্গুনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা এরশাদ মাহমুদসহ সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের নিয়ে নানা বিভ্রান্তিমূলক ভিডিও বার্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারের অভিযোগে বিতর্কিত বৌদ্ধ ভিক্ষু শরনাঙ্কর থের এর বিরুদ্ধে আইসিটি এ্যাক্টে দুটি মামলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাতে টিটু বড়ুয়া নামের ক্ষুদ্ধ এক ব্যক্তি রাঙ্গুনিয়া থানায় একটি মামলা করেন। এর আগে বুধবার ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটুক্তি ও সারা দেশের ৩০ হাজার মানুষ শরনাঙ্কর থের’কে খোদা মানেন এমন ভিডিও প্রচারের অভিযোগে মাওলানা হাকিম উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি অপর মামলাটি দায়ের করেন। রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি সাইফুল ইসলাম আইসিটি এ্যাক্ট ও দন্ড বিধির বিভিন্ন ধারায় মামলা দুটি রুজু করা হয়েছে বলে সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

টিটু বড়ুয়ার দায়ের মামলার অভিযোগে বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধের চেতনা বিরোধী কার্যক্রম তথা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে বিভিন্ন প্রচার ও প্রপাগান্ডা চালিয়ে যাচ্ছে রাঙ্গুনিয়ার ফলাহারিয়া জ্ঞাণশরণ মহা অরণ্য বৌদ্ধ বিহারের ভিক্ষু শরণাঙ্কর থের। তিনি সর্বশেষ ২৪ মিনিটের ভিডিওতে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী ব্যারিষ্টার বিপ্লব বড়ুয়া, আওয়ামী লীগ নেতা এরশাদ মাহমুদসহ গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা, বন বিভাগ ও বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন ব্যক্তি সম্পর্কে মানহানিকর তথ্য প্রচার ও প্রকাশ করে এলাকায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে দাঙ্গা সৃষ্টির অপচেষ্ঠা চালাচ্ছেন।
টিটু বড়ুয়া বলেন, শরনাঙ্কর থের ইতিমধ্যে শতাধিক একর বনের জায়গা দখল করেছেন। তার দখলের উম্মত্ততা থেকে বাদ যায়নি হিন্দুদের একযুগের পুরনো শ্মশান খোলা। শ্মশান থেকে ১২টি শবঘর উপড়ে ফেলে দিয়েছে।

এদিকে উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের ফলাহারিয়া গ্রামের সনাতনী সম্প্রদায়ের দীর্ঘদিনের পুরাতন শ্মশান দখল ও ভাংচুরের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে উপজেলা কেন্দ্রিয় পুজা উদযাপন পরিষদ।

বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকালে উপজেলা সদর ইছাখালীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে অনুষ্ঠিত হয়। এতে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ও পূজা উদযাপন পরিষদের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলা কেন্দ্রিয় পূজা উদযাপন পরিষদের সিনিয়র সহসভাপতি শৈবাল চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক সুপায়ন সুশীল, সমীর চক্রবর্তী, টিবলু নাথ, অনুজিৎ দে, শিবু চক্রবর্তী, প্রিয়তোষ কান্তি দে, সুবেল দেব, মানিক কান্তি দাশ, হৃদয় দাশ, পরিমল দাশ, শিপন সাহা, সুমন দে, অভি দাশ, সুকান্ত দাশ, রামপ্রদ দাশ, পুলক দত্ত, বিজয় নন্দী, রুবেল দত্ত, শয়ন দত্ত, উষ্ণা দাশ, সমীরণ দত্ত, সমীর মহাজন, নয়ন মহাজন, উজ্জ্বল দে, রুবেল দে, রাজু দে প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, পদুয়া ইউনিয়নের ফলাহারিয়ায় বিতর্কিত বৌদ্ধ ভিক্ষু শরনাঙ্কর থের এর ইন্ধনে হিন্দু সম্প্রদায়ের একমাত্র শ্মশান দখল ও ভাংচুর করা হয়েছে। এই ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হলেও এখনও গ্রেপ্তার হয়নি অভিযুক্তরা। বরং ফলাহারিয়ায় এখনও হিন্দু সম্প্রদায়ের জনসাধারণকে ক্রমাগত হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। মানববন্ধন থেকে শ্মশান দখল ও ভাংচুরের সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবী জানানো হয়। এছাড়া এই ঘটনার ইন্ধনদাতা শরনাঙ্কর ভান্তেকে রাঙ্গুনিয়ায় অবাঞ্চিত ঘোষণা করে তাকেও দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবী করা হয়। অন্যথায় আরও বৃহৎ আন্দোলনের হুশিয়ারি দেন বক্তারা।

এর আগে প্রতিবাদী হিন্দু সমাজের আয়োজনে একই দাবীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হলে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসেছিলেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন সহ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।