বুধবার , ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ১৫ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

রুখে দাও ভারতীয় অগ্রাসণ।

প্রকাশিত হয়েছে-

মোঃরাকিব”বিশেষ প্রতিনিধিঃ

 

আজ সেই নারকীয় ৭ই জানুয়ারি। হ‍্যা আজই সেই ফেলানী দিবস। ফেলানী খাতুনের দশম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভোর ৬টায় কুরিগ্রাম ফুলবাড়ি সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষি বাহিনী (বিএসএফ) ঠান্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করে ফেলানীকে।

বিএসএফ এর গুলিতে গুলিবিদ্ধ ফেলানী আধাঘণ্টা ধরে সীমান্তের কাঁটাতারের সাথে ঝুলে থেকে ‘পানি পানি’ বলে আহাজারি করতে থাকে। গুলি চালানোর পর ভারতের অনন্তপুর ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা লাশের পাশ দিয়ে টহল দিতে থাকে। তারা ফেলানীর বুকফাটা আর্তনাদ আনন্দের সঙ্গে উপভোগ করছিল। এক সময় কাঁটাতারে ঝুলে থাকা তরুণী ফেলানীর নিথর শরীর নিস্তব্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ সময় ধরে কাটাতারের সাথে ঝুলে থাকে ফেলানীর লাশ।

নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম নূরু কাঁটাতারের বেড়া অতিক্রম করে বাংলাদেশে এলেও মেয়ের আর্তচিৎকারে সাড়া দিতে পারেননি। হত্যার ৩০ ঘণ্টা পর বিএসএফ ফেরত দেয় ফেলানির লাশ।
সেই হতভাগ্য ফেলানীর বাড়ি নাগেশ্বরী উপজেলার দক্ষিণ রামখানা ইউনিয়নের বানার ভিটা গ্রামে।

বাংলাদেশ ও ভারতের গলায় গলায় বন্ধুত্বে সীমান্তের কাঁটাতারের সাথে আটকে থাকা ফেলানীর ঝুলন্ত লাশের ছবি হইচই ফেলে দেয় বিশ্বজুড়ে। সারাবিশ্বের ছড়িয়ে পড়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বর্বরতা। ফেলানী হয়ে উঠে প্রতিবাদের প্রতীক। সেই নৃশংসতার শিকার ফেলানী খাতুনের মরদেহ কাটাতারের সঙ্গে ঝুলে থাকার ঝুলন্ত ছবি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ব‍্যাপক আকারে প্রচার হওয়ায় ভারত হত্যাকারী বিএসএফ সদস্যদের বিচারের প্রতিশ্রুতি দেয়। বিচার প্রক্রিয়া শুরুও হয়েছিল। তবে তৈরি হয়েছিল এক মহাপ্রহসনের বিচার।

ফেলানী হত্যার কড়া প্রতিবাদ পর্যন্ত করতে পারেনি বাংলাদেশ; বরং সেই হত্যাকারীদের সাথে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নাকি এখন ইতিহাসের সর্বোচ্চচূড়া অতিক্রম করেছে। তাদের সব চাওয়া-পাওয়া সব দাবী পূরণ করা হয়েছে। বিশালাকার ভাবে প্রচার করা হয় হত্যাকারী ভারতের সঙ্গে রক্তের সম্পর্ক, রাখিবন্ধনের সম্পর্ক এমনকি এদেশের অধিপতিরা বলে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের কথা।

ফেলানীকে নৃশংসভাবে হত্যার পর হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো মানবাধিকার সংগঠন বিএসএফকে একটি ‘খুনে বাহিনী’ হিসেবে অভিহিত করে। বিশ্বজুড়ে প্রচার হয়ে যায় প্রতিষ্ঠিত বিএসএফ একটি বর্বর বাহিনী। এই বাহিনী এর আগেও বহু নারী ও শিশুদের নির্মমভাবে হত্যা করেছে। ফেলানী হত্যার আগে ২০১০ সালের মে মাসে ঠাকুরগাঁওয়ের রত্মাই সীমান্তের এক কিলোমিটার ভেতরে এসে পারুল নামে ১৪ বছরের এক কিশোরীকে হত্যা করেছিল। বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের প্রতিবাদ ও বিশ্বের দেশে দেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠায় ভারত ফেলানী হত্যার বিচারের প্রতিশ্রুতি দেয়। বিএসএফ এর ডিজি বাংলাদেশে এসে প্রতিশ্রুতি দিয়ে অঙ্গিকার করেছিলেন ‘আর কোনো বাংলাদেশী নাগরিকের ওপর তারা কোনো মারণাস্ত্র ব্যবহার করবেন না’। শুধু সেইবারই নয় কত শতবার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা তার কোনো হিসেব নেই। কিন্তু সে প্রতিশ্রুতির ছিটে ফোটাও তারা রাখতে পারেননি।

বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের আমলে বর্বর ভারতীয় বাহিনী বিএসএফ এই পৈশাচিকতা ফ্রি-স্টাইল লাইসেন্সে পরিণত হয়েছে। আর নরঘাতক ভারতীয় বাহিনীর এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে একবারও প্রতিবাদ করতে পারেনি বাংলাদেশের সরকার।