লোহাগাড়ায় সরকারি আইনকে অমান্য করে পাহাড় কাটার মহোৎসব: ভারসাম্য হারাচ্ছে পরিবেশ

বিশেষ প্রতিনিধি,

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার কলাউজান ইউনিয়নে এলাকায় নির্বিচারে পাহাড় কাটার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকারের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রকাশ্য চলছে পাহাড় কাটার মহোৎসব। এতে করে একদিকে পরিবেশ হারাচ্ছে তার প্রাকৃতিক ভারসাম্য। অন্যদিকে পাহাড়ে বসবাসরত প্রাণীকূল হারাচ্ছে নিরাপদ আবাসস্থল।

আজ ১৮ ফেব্রুয়ারী”২০২২ইং শুক্রবার বিকেলের দিকে কলাউজান ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের মিয়াজি পাড়া গাবতলি এলাকার দক্ষিণে জাকের বর পাড়া সংলগ্নে পাহাড় কাটার এ দৃশ্য দেখা যায়।

সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিগত কয়েক সাপ্তাহে ধরে কলাউজান গাবতলি মিয়াজির পাড়া জাকের বর পাড়া সংলগ্নে এলাকায় মাটি খেকো বেলাল ও দেলোয়ার সহ বেশ কিছু প্রভাবশালীদের নেতৃত্বে পাহাড় কাটার একটি সিন্ডিকেট চক্র স্থানীয় প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে চালায় যাচ্ছে পাহাড় কাটা। রাত-দিন অন্তত ১০/১৫টি ডেম্পার গাড়িতে করে পাহাড়ের মাটি বিক্রি করে যাচ্ছে এই সিন্ডিকেট চক্রটি। প্রায় ৪৫ ফুট ধারণকৃত প্রতি গাড়ি পাহাড়ি মাটি ৮০০-১০০০ টাকা হারে বিক্রি করে রাতারাতি লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি। চক্রটি এ পর্যন্ত ৩০-৫০ ফুট উঁচু পাহাড় কেটে সাবাড় করতেছে। এতে পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে ফাটল সৃষ্টি হওয়ায় প্রবল বর্ষনে পাহাড় গুলো ধসে পাশে বসবাসরত এলাকাবাসীর যেকোন মূর্হুতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বর্তমানে পাহাড়টি অর্ধেক অংশ ইতিমধ্যে কাটা শেষ হয়েছে। বাকিটাও নিশ্চিহ্ন হবার পথে।

বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ ধারা ৬ এর (খ) স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কতৃর্ক সরকারী বা আধা-সরকারী বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বা দখলাধীন বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কর্তন বা মোচন করা যাবে না। কিন্তু এই নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রকাশ্য চালায় যাচ্ছে পাহাড় কাটার মহোৎসব।

ওই এলাকার বসবাসরত কয়েক জন প্রবীন ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, এক সময় এলাকায় পাহাড়ের অন্যতম সৌন্দর্য ছিলো। সেখানে বিভিন্ন প্রজাতির গাছগাছালি ও প্রাণী ছিলো। কিন্তু অবৈধ ভাবে পাহাড় কাটার ফলে ওই এলাকার পরিবেশ হারাচ্ছে তার প্রাকৃতিক ভারসাম্য। এছাড়া পাহাড় উজাড় হওয়া কারণে পাহাড়ে বসবাসরত প্রাণীকূল হারাচ্ছে তাদের নিরাপদ আবাসস্থল। এতে করে পাহাড়ের অন্যতম সৌন্দর্য বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীগুলোকে এখন আর দেখা যায় না। বর্তমানে স্পটটি হারাতে বসেছে তার অতীত ঐতিহ্য। তাছাড়াও দিনরাত পাহাড় নিধন চললেও বাধা দেওয়ার যেন কেউ নেই। এই পাহাড়ের মাঠি দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ভরাট করা হচ্ছে ছোট বড় পুকুর ও জলাশয়।

এদিকে পাহাড় কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রথমে স্বীকার করলেও পরে মাটি ব্যবসায়ী বেলাল অস্বীকার বলেন, পাহাড় কাটতেছে দেলোয়ার। কিন্তু তিনি গাড়ি ভাড়া দিয়েছে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে পদুয়া বনবিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান, খবর নিয়ে পাহাড় খেকোদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছে বলেও জানান তিনি।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহসান হাবীব জিতু জানান, পাহাড় নিধন সম্পূর্ণ অবৈধ। অতি শীগ্রই তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *