শনিবার , ৬ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ২২শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - শরৎকাল || ১৪ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যের মক্তব= মুফতি হাবিবুর রহমান মিছবাহ

প্রকাশিত হয়েছে-

এইচ এম শাহাবউদ্দিন তাওহীদ।

 

মক্তব। সকালে পবিত্র কোরআন ও ইসলামী জ্ঞান শিক্ষার পাঠশালার নাম। মক্তব বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যের নাম। প্রতিদিন ফজরের পর মসজিদের মাইক হতে এলাকার ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের মক্তবে আহবান করা হতো।

ছেলে-মেয়েদের মা সকালে বাচ্চাদের অযু করিয়ে, সুন্দর পোশাক পরিয়ে এবং সামান্য নাস্তা করিয়ে মক্তবে পাঠাতেন। কখনও কখনও বাচ্চাদের সঙ্গে মুড়ি চিড়া বা এ ধরনের খাবারও দিয়ে দিতেন। মক্তবের বিরতিকালীন সময়ে বাচ্চারা খেয়ে নিত।

বাংলাদেশ ৯২ ভাগ (বেশি-কম) মুসলমানের দেশ। এ দেশে ইসলামী শিক্ষার গুরুত্ব অপরিহার্য। এ দেশের মানুষ সবার আগে কালেমা শেখে। ইসলামী জ্ঞান অর্জনের জন্য হাজার হাজার মাদরাসা রয়েছে এ দেশে। তবে শিশুদের প্রাথমিক ইসলামী শিক্ষার হাতেখড়ি এই মক্তব থেকেই।

আগের দিনে ফজরের পর গ্রামের রাস্তায় হাঁটতে বের হলে মহিলাদের গুনগুন আওয়াজে পবিত্র কোরআনুল তেলাওয়াতের শব্দ পাওয়া যেত। এখন সেগুলো অতীত। মুসলমান শিশুদের মুখে কালেমা নেই, তেলাওয়াত নেই, মোবাইলে আসক্তি হয়ে পড়ছে বর্তমান সময়ের বাচ্চারা। এর ফলেই বর্তমান সময়ে যুব সমাজের মাঝে চরম চারিত্রিক অবক্ষয় দেখা দিয়েছে। ভবিষ্যতে এ রোগ মহামারি আকার ধারণ করবে।

মক্তবের দিনগুলোর কথা স্মরণ হলে মনে হয় যেনো সেই দিনগুলিই ছিল আমাদের সোনালী দিন। সূরে সূরে বিভিন্ন মাসয়ালা মাসায়েল শিক্ষা দিতেন মক্তবের হুজুর। আমরাও আনন্দ উল্লাস করে সেগুলো পড়তাম। মক্তব ছুটি হলে একসঙ্গে মক্তব থেকে আনন্দচিত্তে বের হতাম আমরা।

রাতে বাড়িতে সেগুলো পড়তাম। মা পড়া ধরতেন। না পারলে পড়িয়ে দিতেন। আগের দিনের মায়েরাও ইসলাম সম্পর্কে বেশ জানতেন। বর্তমান সময়ের মায়েদেরও ইসলামী জ্ঞান নেই, বাচ্চাদেরকেও ইসলামী জ্ঞানের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেন না। করার প্রয়োজনবোধও করেন না।

এখনকার মায়েরা ঘরে ২৪ ঘন্টা টিভিতে অশ্লীল নাচগানের দৃশ্য ছেড়ে রাখেন। সন্তানদের গানে উদ্বুদ্ধ করেন! এগুলো সত্যিই দুঃখজনক। সকালেই তারা বাচ্চাদেরকে কিন্টারগার্ডেনে নিয়ে যান। কেউ কেউ মনে করেন স্কুলের পড়ার ফাঁকে ঘন্টাখানিক মসজিদের হুজুর দিয়ে কোনোমতে কোরআন শিখিয়ে নেবে। কিন্তু তা কি আদৌ সম্ভব? সম্ভব নয়।

আহ! মক্তব! খুব মিস করি তোমাকে!

লেখকঃ মুফতী হাবিবুর রহমান মিছবাহ।