নিজস্ব প্রতিবেদক
এই দোয়াটা আমাদের করে যেতে হবে আল্লাহ পাক যেন জামিয়ার যে ঐতিহ্য, সেটাকে আমাদের প্রচেষ্টার সবটুকু দিয়ে রক্ষা করার তাওফিক দেন। হযরত মুফতি আযীযুল হক সাহেব রহ. কখনোই নিজের কোনো সন্তানকে দায়িত্বে বসান নি। পটিয়া মাদরাসার দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে তিনি খুঁজে এনেছেন সেই হাটহাজারির ইছাপুর থেকে হযরত হাজী ইউনুস সাহেব রহ.-কে।
হাজী সাহেব হুজুর এ দায়িত্বে অনেকদিন ছিলেন। পটিয়াকে অনেক বড় করে তোলার জন্য মেহনত অব্যাহত রেখেছেন। এনজিও প্রতিষ্ঠা করেছেন, সেবামূলক কার্যক্রমের জন্য প্রতিষ্ঠান দাঁড় করিয়েছেন, বিভিন্ন জায়গায় খ্রিষ্টান মিশনারী তৎপরতা রোধে নানামুখী দাওয়াতী কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন। এত সুন্দর মেহমানখানা তখন কোথাও ছিলোনা, পটিয়াতে তিনি চমৎকার কলেবরে একটি মেহমানখানা নির্মাণ করেছেন।
তারপর যখন দায়িত্বের একদম শেষলগ্নে পৌঁছে গিয়েছেন, খুঁজে এনেছেন আরেকজন মহারত্ন-কে। দায়িত্বের আসনে বসিয়েছেন হযরত হারুন ইসলামাবাদী রহ.-কে। তিনি চাইলে নিজের ছেলের জন্য এ চেয়ারটি বরাদ্দ দিতে পারতেন, তা করেননি। বরং জামিয়ার কল্যাণের কথা ভেবে, উম্মতের উপকারের কথা মাথায় রেখে, যাকে এখানে বসানো উপযুক্ত মনে করেছেন, তাকেই এনে বসিয়েছেন। হযরত হারুন ইসলামাবাদী রহ. তো অনেক অল্পসময় পেয়েছেন এই জামিয়ায়। একদম অকস্মাৎ তিনি আমাদেরকে ছেড়ে চলে গেছেন আল্লাহর কাছে।
তারপরও দায়িত্ব অর্পণে তিনি এত সতর্ক ছিলেন যে, যখন অসুস্থ হয়ে পড়লেন, চিকিৎসার জন্য ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে যাচ্ছেন, তিনি বললেন—’আমার অবর্তমানে তিনজন মিলে মাদরাসা পরিচালনা করবে। গাজী সাহেব হুজুর, কদীম সাহেব হুজুর এবং বুখারী সাহেব হুজুর রহ.।
পরবর্তীতে হযরত বুখারী সাহেব হুজুরের উপর সে দায়িত্ব এককভাবে আসে। তেমনিভাবে হযরত বুখারী সাহেব হুজুরও যখন একদম জীবনের শেষ সময়গুলো পার করছিলেন, তিনি অনেক ইস্তিখারা এবং চিন্তাভাবনা শেষে একজন যোগ্য এবং জামিয়ার জন্য উপযোগী একজন কর্ণধারের হাতে দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। নিজ সন্তানদেরকে সামনে আনেননি। এটাই হচ্ছে কওমি মাদরাসার ঐতিহ্য, স্বকীয়তা এবং বৈশিষ্ট্য।
অন্যান্য সব জায়গায় কমবেশি স্বজনপ্রীতি হয়ে থাকে। কিন্তু পটিয়া মাদরাসা এটা প্রমাণ করেছে, যেমনি আল্লাহর রাসূল খিলাফত প্রদানের সময় ‘আমার পর আবু বকর হক্ব’ বলে প্রমাণ করেছিলেন ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি। পটিয়া মাদরাসাও এ শিক্ষাকে ধারণ করে সবসময়ই উম্মতের কল্যাণচিন্তাকে অগ্রে রেখে দৃষ্টান্ত রেখেছে এবং রাখছে।
সেইসাথে এ বিশ্বাসও আমাদের আছে, এগুলো সবই আমাদের আকাবিরের ইলহামী সিদ্ধান্তের বহিঃপ্রকাশ। পটিয়ার সকল মুরব্বিদের উপর আমাদের সে আস্থা আছে। আমরা আশা করবো, এমন কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা আমাদের জামিয়াতে ঘটবেনা, যেটা আমাদের সোনালী ইতিহাসকে ধুয়েমুছে বিলীন করে দেয়। আমাদের মর্যাদাময় অতীতকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে।
তাই আমাদের উচিত তাদের জন্য দুআ করা। আল্লাহ আমাদেরকে সু-পরামর্শ প্রদানের তাওফিক দান করেন। জাতিকে সামনের দিকে নিয়ে যেতে সহযোগিতা করার তাওফিক দান করেন। তাঁদের হাত ধরে যেন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এ জামিয়া পৌঁছে যেতে পারে। ইখলাসের মাধ্যমে, চোখের পানির মাধ্যমে এ জামিয়া ইনশা আল্লাহ অনেক দূর পৌঁছে যেতে সক্ষম হবে।
পরিশেষে আমি আরও একটি দুআ আল্লাহর দরবারে করতে চাই, আল্লাহ যেন আমাদের মুরব্বীদের ছায়া আমাদের উপর আরও দীর্ঘায়িত করেন। জামিয়ার সংশ্লিষ্ট সবাইকে ইখলাসের উপর অবিচল থেকে সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে জামিয়াকে সফলতার চূড়ান্ত শিখরে নিয়ে যেতে ভরপুর সাহায্য করেন। আমিন।
পূর্ণ বক্তব্যটি নিম্নের লিঙ্ক থেকে পড়তে পারেন–