
প্রেস বিজ্ঞপ্তি, ১৫ অক্টোবর ২০২৫
জুলাই সনদের ভিত্তিতে ‘পিআর’ পদ্ধতিতে ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনসহ পাঁচ দফা দাবিতে কক্সবাজার জেলা জামায়াত মানববন্ধন। কক্সবাজার, (সংবাদদাতা): ৫ দফা গণদাবি আদায়ের লক্ষ্যে ১৫ অক্টোবর ২০২৫, সকাল ৯ টায় কক্সবাজার শহরের কোর্ট বিল্ডিং প্রাঙ্গণে বিশাল মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কক্সবাজার জেলা। ‘জুলাই সনদের ভিত্তিতে ‘পিআর’ পদ্ধতিতে ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনসহ পাঁচ দফা দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীসহ বিপুল সংখ্যক সাধারণ জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন। মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন কক্সবাজার জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা নূর আহমদ আনোয়ারী। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেছেন, বর্তমান সংখ্যাগরিষ্ঠ ভিত্তিক নির্বাচনী ব্যবস্থা জনগণের একটি বৃহৎ অংশকে প্রতিনিধিত্বহীন করে রেখেছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হলো ‘পিআর’ পদ্ধতি গ্রহণ করা, যা এখন ‘সময়ের দাবি, জনগণের দাবি এবং গণতন্ত্র রক্ষার দাবি’। তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, জনগণের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অবিলম্বে পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হোক। একই সাথে আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়নের বিষয়ে জনগণের মতামত জানতে জুলাই সনদের সাংবিধানিক ভিত্তির লক্ষ্যে আয়োজিত গণভোটের সাথে পিআর পদ্ধতিকেই অন্তর্ভুক্ত করে আগামী নভেম্বরের মধ্যে তা বাস্তবায়নের দাবি জানান তিনি। অন্যথায়, এই দাবি আদায়ের জন্য জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথেই চূড়ান্ত সমাধান করার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তিনি আরো বলেন, পিআর পদ্ধতিতে প্রতিটি রাজনৈতিক দল তাদের মোট ভোটের আনুপাতিক ভিত্তিতে সংসদে আসন পাবে, ফলে কোনো ভোট নষ্ট হবে না এবং ছোট-বড় সব দলই প্রকৃত সমর্থনের অনুপাতে প্রতিনিধিত্ব পাবে। জুলাই সনদকে আইনি মর্যাদা দিতে জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট দিতে হবে। তিনি মনে করেন, জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে প্রভিশনাল সাংবিধানিক আদেশে জুলাই সনদকে আইনি মর্যাদা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশে আলাদাভাবে গণভোট আয়োজনের অতীত নজির রয়েছে উল্লেখ করে তিনি ‘রাষ্ট্রপতি আস্থা গণভোট’ এবং সংসদীয় পদ্ধতির সরকার প্রবর্তনের লক্ষ্যে ‘সাংবিধানিক গণভোট’-এর উদাহরণ দেন। জেলা সাংগঠনিক সেক্রেটারি আল আমীন মু. সিরাজুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর অ্যাডভোকেট ফরিদ উদ্দিন ফারুকী, জেলা সেক্রেটারি জাহিদুল ইসলাম, সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন, জেলা মানবাধিকার সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট জাফর উল্লাহ ইসলামাবাদী, কক্সবাজার শহর আমীর ও কক্সবাজার ১ সংসদীয় আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল ফারুক, কক্সবাজার সদর আমীর অধ্যাপক খুরশিদ আলম আনসারী, জেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন সেক্রেটারি মুহাম্মদ মুহসিন, কক্সবাজার শহর জামায়াতের সেক্রেটারি রিয়াজ মোহাম্মদ শাকিল, জেলা বারের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ ইবরাহিম খলীল, অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ নূরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট দেলাওয়ার হোসাইন। বক্তারা মানববন্ধন থেকে ঘোষিত পাঁচ দফার আলোকে নিন্মোক্ত সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন।
১. পিআর পদ্ধতি চালু: উভয় কক্ষে সংখ্যানুপাতিক হারে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে, যাতে প্রতিটি ভোট ও ছোট-বড় সব দলের মর্যাদা নিশ্চিত হয় এবং জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়। তাছাড়া ভোট ডাকাতি, কালো টাকার ছড়াছড়ি, কেন্দ্র দখল, নমিনেশন বাণিজ্যসহ অগণতান্ত্রিক আচরণ বন্ধে পিআর এর কোনো বিকল্প নাই। ২. জুলাই সনদ ও গণভোট: জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের মাধ্যমে সনদকে আইনি মর্যাদা দিতে হবে এবং এর ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। সেইসাথে পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের পক্ষে জনমত জরীপের জন্য তা ওই গণভোটে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ৩. লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড: আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষ ভূমিকাসহ সকল প্রার্থীর জন্য নির্বাচনি আচরণবিধি, সুযোগ-সুবিধা এবং নিরাপত্তা সমানভাবে নিশ্চিত করে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরি করতে হবে। ৪. রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের দাবি: ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী ১৪ দলীয় জোটের সকল রাজনৈতিক দলগুলোর রাজনীতি নিষিদ্ধ এবং নির্বাচনে নমিনেশন বাণিজ্য, কালোটাকা ও পেশিশক্তির ব্যবহার রোধ করতে হবে। ৫. বিচার: জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ২০০০ শহীদ ও ৩০০০০ আহত ও পঙ্গুত্ববরণকারী ভাই-বোনদের ন্যায্য দাবী উই ওয়ান্ট জাস্টিসের ভিত্তিতে খুনি ও লুটেরাদের বিচার দৃশ্যমান করার ধারাকে জোরদার করতে হবে। বক্তারা বলেন, জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত এই দাবিগুলো আজ ‘সারা দেশের মানুষের হৃদয়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে’। তাই দাবিগুলো বাস্তবায়নে সরকার কে সকল প্রকার চাপমুক্ত হয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করার আহ্বান জানান।
Leave a Reply