মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নের অফসোর হাইস্কুলে চলছে নিয়োগ বানিজ্য ৷ এই স্কুলের কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে রয়েছে নিয়োগের নামে মোটা অংকের টাকা লেনদেনের অভিযোগ ৷
কমিটির সদস্যদের চাহিদা মাফিক টাকা দিতে না পারলে পরীক্ষা বাতিল করা সহ নানান অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে ৷
ভুক্তভোগীদের অভিযোগের আলোকে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসতে থাকে একে একে নানান চমকপ্রদ তথ্য ৷
অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত স্কুলের সহকারী গ্রন্থাগারিক কাম ক্যাটালগার পদে নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করা হয় ৷
প্রার্থীদের নম্বর কমের অজুহাত দেখিয়ে ঐ পরীক্ষাটি বাতিল করে স্কুল পরিচালনা কমিটি ৷
একই পদে পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ার জন্যে ২০২০ সালের শেষের দিকে মহেশখালী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভেন্যু নির্ধারণ করা হয় ৷
উক্ত পদের একজন প্রার্থী তাহামিনা ইয়াসমিনের অভিযোগের ভিত্তিতে পুনরায় উক্ত নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করা হয় ৷
তাহামিনা ইয়াসমিনের সাথে কথা বললে তিনি জানান, খুবই চুপিসারে উক্ত পরীক্ষা নেওয়ার বন্দোবস্ত করা হয় ৷ আমাদেরকে কোন ধরনের প্রবেশপত্র ইস্যু না করে পরীক্ষার বন্দোবস্ত করা হলে আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসার, জেলা শিক্ষা অফিসার, শিক্ষা সচিবের কাছে অভিযোগ করি ৷ উক্ত অভিযোগের ভিত্তিতে পরীক্ষাটি বাতিল করা হয় বলে তিনি জানান ৷
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়,
উক্ত পদে চলতি মাসের ৫ফেব্রুয়ারি চকরিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে পুনরায় পরীক্ষা নেওয়া হয় ৷ নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ০৬জন প্রার্থীদের মধ্যে ক্রমান্বয়ে প্রার্থীদের প্রাপ্ত নাম্বার ছিলো ৩৯, ২৮, ১৯, ১৯, ১৮ ও ১৫ ৷
এই পরীক্ষার পরপরেই শুরু হয় পরীক্ষা বাতিল করার নানান কলা কৌশল ৷
জানা যায়, কমিটির সদস্যদের পছন্দের এক মহিলা প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে নানান ছলচাতুরির আশ্রয় গ্রহণ করে স্কুল পরিচালনা কমিটি ৷ পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নাম্বার প্রাপ্ত প্রার্থীকে বাদ দিয়ে তৃতীয় স্থান অধিকারী প্রার্থীকে নিতে তোড়জোড় শুরু হলে বেরিয়ে আসতে থাকে আরও নানান চমকপ্রদ তথ্য ৷
এ নিয়ে কমিটির মাঝে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হলে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর অভিযোগ আসে ৷
লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি স্কুল কমিটির সদস্যদেরকে মৌখিকভাবে সতর্ক করলে কমিটির সদস্যরা এতে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ তুলে পরীক্ষা বাতিলের নানান কলাকৌশল রচনা করতে থাকে ৷
এবিষয়ে বক্তব্য জানতে নিয়োগ পরীক্ষা বোর্ডের সদস্য, চকরিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদ উদ্দিন, স্কুল কমিটির সদস্য ও কুতুবজোম ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান নুর হোসাইন, মহেশখালী একাডেমিক সুপারভাইজার ও উক্ত স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বললে প্রত্যেকেই একবাক্যে স্বীকার করেন- আমরা সকলে উপস্থিতিতেই পরীক্ষা নেওয়া হয় ৷ এবং প্রশ্ন
ফাঁসের বিষয়ে জানতে চাইলে ক্ষিপ্ত হয়ে তারা বলেন, এমন অভিযোগ ভুয়া মিথ্যা ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন ৷
স্কুল ম্যানেজিং কমিটির দাতা সদস্য সাইফুল হক সিকদারের সাথে কথা বললে তিনি এনিয়ে বিনিয়ে প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি তুলে আনেন ৷ তবে কমিটির অপরাপর সদস্যদের সাথে প্রতিবেদকের কথা হয়েছে মর্মে জানানো হলে তিনি আমতা আমতা করে ফোন কেটে দেন ৷
উক্ত স্কুলের সভাপতি এডভোকেট নুরুল হুদার সাথে প্রতিবেদকের কথা হলে তিনি প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি সামনে এনে বলেন, পরীক্ষার সময় তিনি দেরিতে উপস্থিত হন এবং আমার অনুপস্থিতে পরিক্ষা শুরু করা হয় ৷
তিনি আরও বলেন, আমাদের স্কুলে আগামী শনিবার মিটিং আছে ৷ মিটিং শেষে সাংবাদিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিফিং করা হবে ৷
নিয়োগ কমিটির অপর সদস্য কুতুবজোম ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান নুর হোসেন বলেন,” আমরা পূর্ব রুটিন মাফিক বিগত ৫ তারিখ নিয়োগ কমিটির সকল সদস্য উপস্থিত হয়ে সবার সামনে তৎক্ষনাৎ প্রশ্ন তৈরী করে পরীক্ষা নেওয়া হয় এবং পরীক্ষা শেষে আমরা চলে আসি।”
তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত স্কুল ম্যানেজিং কমিটি উক্ত নিয়োগ পরীক্ষাটি বাতিল করে ১৮ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় এক পত্রিকায় পুনঃ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ৷
স্কুলের দাতা সদস্য সাইফুল হক সিকদারের পছন্দের এক মহিলা প্রার্থীকে নিতে তার সাথে প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা নগদে লেনদেন হয় বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায় ৷
দাতা সদস্যের ঘুষ গ্রহণের খবরটি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে তার সন্তান প্রতিবেদককে মোবাইল ফোনে হুমকি দেন ৷
Leave a Reply