————————————————————–
প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিজ হাতে গড়া মদিনার অন্যতম স্থাপনা মসজিদে নববি। এ মসজিদের মর্যাদা ও জিয়ারতে রয়েছে অনেক ফজিলত। তবে যে কোনো জিনিসের মর্যাদা ও ফজিলতের জন্য নিয়তের পরিশুদ্ধতা আবশ্যক। মসজিদে নববির জিয়ারতে ফজিলত লাভের ক্ষেত্রেও নিয়তের আবশ্যকতা অপরিহার্য।
হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ বুখারি ও মুসলিমে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে- ‘তিনটি মসজিদ ছাড়া অন্য কোথাও (সাওয়াবের আশায়) সফর করাই বৈধ নয়। আর তাহলো-
মসজিদুল হারাম তথা পবিত্র মক্কা নগরির কাবা শরিফ।
আমার এ মসজিদ তথা মদিনার মসজিদে নববি এবং
মসজিদুল আকসা তথা মুসলমানদের প্রথম কেবলা ও অসংখ্য আম্বিয়া কেরামের পদধূলিতে ধন্য বাইতুল মুকাদ্দাস।
মসজিদে হারাম তথা কাবা শরিফ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-
‘অবশ্যই যে মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাকওয়ার ওপর, প্রথম দিন থেকে তার বেশি হকদার যে, তুমি সেখানে সালাত কায়েম করতে দাঁড়াবে। সেখানে এমন লোক আছে, যারা উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করতে ভালোবাসে। আর আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন।’(সুরা তওবা : আয়াত ১০৮)
অন্য দিকে মদিনার মসজিদে নববির জিয়ারত ও ফজিলত লাভের ব্যাপারে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেন-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে আমার এ মসজিদে শুধুমাত্র কোনো কল্যাণ শেখার জন্য কিংবা শেখানোর জন্য আসবে, তার মর্যাদা হবে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর সমতুল্য।
আর যে অন্য কোনো উদ্দেশে আসবে, তার অবস্থা হবে ওই ব্যক্তির মতো, যে অন্যের মাল-সামগ্রীর প্রতি তাকায়। (ইবনে মাজাহ)
সুতরাং মদিনার মসজিদে নববির জিয়ারাতের নিয়তে থাকতে হবে পরিশুদ্ধতা। উদ্দেশ্য থাকবে শুধু কল্যাণ লাভ করা। যার সুসংবাদ দিয়েছেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ।
হজরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করনে, ‘যে ব্যক্তি শুধুমাত্র কল্যাণ শেখা বা শেখানোর উদ্দেশে মসজিদে (নববিতে) আসবে, তার জন্য পূর্ণ এক হজের সওয়াব লেখা হবে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন, ‘আমার ঘর (আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার ঘর) ও তার মিম্বরের মাঝখানের জায়গা টুকুকে (রওজাতুম মিন রিয়াজিল জান্নাহ) জান্নাতের অন্যতম উদ্যান বলা হয়। (বুখারি ও মুসলিম)
আর এ কারণেই মদিনার মসজিদে নববি মর্যাদা এতবেশি। আর এ মসজিদে ইবাদাত বন্দেগিতে রয়েছে অনেক ফজিলত। যা প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আমার এ মসজিদে এক নামাজ আদায় করা মসজিদে হারাম ছাড়া অন্যান্য মসজিদে এক হাজার নামাজ আদায় করার চেয়েও উত্তম। (বুখারি ও মুসলিম)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, এতে এক ওয়াক্ত নামাজ পড়লে এক হাজার নামাজ পড়ার সওয়াব পাওয়া যায়।’
সুতরাং হাদিসের তথ্য অনুযায়ী মসজিদে নববিতে এক ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা অন্য মসজিদে ৬ মাস ২০ দিন নামাজ পড়ার সমতুল্য।
তবে এ জন্য শর্ত হলো মসজিদে নববির জিয়ারত ও ফজিলত লাভে নিজেদের নিয়তকে পরিশুদ্ধ করে নিতে হবে। লোক দেখানো কিংবা খ্যাতি ছড়ানোর কোনো মানসিকতা না থাকাই শ্রেয়। তবেই সম্ভব হবে সফলতা লাভ করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হৃদয়ের সর্বোচ্চ আবেগ ও অনুভূতির সঙ্গে পবিত্র এ স্থান জিয়ারতের তাওফিক দান করুন। হাদিসে ঘোষিত ফজিলত লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Leave a Reply