
আলমগীর ইসলামাবাদী
চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি
বিশিষ্ট ইসলামী গবেষক ও লেখক, রাহবারে বায়তুশ শরফ আল্লামা শায়খ মোহাম্মদ আবদুল হাই নদভী (ম.জি.আ) বলেন, আত্মশুদ্ধি ও তাকওয়ার ওপর ভিত্তি করে শান্তিপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণে আলেম – ওলামাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ, ঐক্য প্রতিষ্ঠার কোন বিকল্প নেই। তিনি বলেন, আলেম-ওলামারা ঐক্যবদ্ধ হলে বহুধাবিভক্ত মুসলিম সমাজও এক হয়ে যাবে এবং সমাজে শান্তি ফিরে আসবে। তিনি বলেন, আলেমরা হলেন নবী-রসুলদের উত্তরসূরি।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ)। সুতরাং নবী-রাসুলদের জীবনচিত্র সম্পূর্ণটুকু প্রতিফলিত হতে হবে আলেমদের মাঝে। তাদের কথা-কাজ, আচার-ব্যবহারে এক ধরনের জান্নাতি শোভা বিরাজ করতে হবে। কোনো ধরনের লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ তাদের আত্মায় স্থান পাবে না। এমনকি তাঁরা চরম অত্যাচারীর চোখ রাঙানোকেও ভয় করবেন না। ভয় পাবেন না মিথ্যার সামনে অবলীলায় সত্য তুলে ধরতে। দুঃখজনক হলেও সত্য, আজ আলেম সমাজের মাঝে ঠিক উল্টো চিত্রই আমরা দেখতে পাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, যাদের মাঝে নববী চরিত্রের সমাহার ঘটবে কেবল তারাই নবীর উত্তরসূরি হতে পারবেন।
ঐক্যের ক্ষেত্রে অবশ্যই অহংকার, হিংসা-বিদ্বেষ পরিহার করে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, ভালোবাসা এবং অন্যের কথা শোনার মতো মানসিকতা তৈরি করতে হবে। একই সঙ্গে অন্যের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখতে হবে। তাহলেই হতে পারে আলেম সমাজের ঐক্য। তিনি আরো বলেন, মতপার্থক্য থাকতেই পারে, কিন্তু ইসলামের মৌলিক বিষয়ে আনুগত্য ও আস্থাশীল থাকলে ক্ষুদ্র মতপার্থক্য ঐক্যের পথে বাধার প্রাচীর হতে পারেনা। তাই সময়ের দাবি হচ্ছে, রাজনীতির উর্ধে থেকে সব হক্কানি ওলামা-পীর-মাশায়েখের ঐক্যবদ্ধ হওয়া। এই লক্ষ্য ও উদ্দশ্যকে সামনে রেখে ১৯৯৬ সালে বায়তুশ শরফের প্রধান রূপকার আল্লামা শাহসুফি আবদুল জব্বার (রাহঃ) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মজলিসুল ওলামা বাংলাদেশ।
রাহবারে বায়তুশ ও মজলিসুল ওলামা বাংলাদেশের সভাপতি আল্লামা আবদুল হাই নদভী আজ ৯ জানুয়ারী শনিবার সকাল ১০টায় মজলিসুল ওলামা বাংলাদেশের কেন্দ্রীয়, চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠান ২০২১-এ সভাপতির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা গুলো বলেন।
সম্মানিত অতিথি বক্তব্যে বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ বায়তুশ কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ড. মাওলানা সাইয়েদ আবু নোমান আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে যুগে যুগে আলেম-ওলামাদের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে বলেন, উপমহাদেশের আযাদী আন্দোলনে এ দেশের আলেম সমাজের ভূমিকা শুধু যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রশংসনীয় তাই নয়, বরং অবিস্মরণীয়। সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজদের গোলামির শৃঙ্খল থেকে স্বদেশকে মুক্ত করার জন্য আলেম সমাজের অসাধারণ ত্যাগ ও কোরবানি, কঠোর সংগ্রাম এ উপমহাদেশের ইতিহাসের এক চিরস্মরণীয় অধ্যায়। আলেম সমাজের এমন গৌরবদ্বীপ্ত ভূমিকা পালনের ক্ষেত্রে নেয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করেছিল পারস্পরিক মহব্বত, শ্রদ্ধাবোধ, সহানুভূতি ও শিষ্টাচার। তিনি বলেন, ইসলাম প্রিয় সাধারণ মানুষ ওলামায়ে কেরামের মাঝে আবারও সেই সোনালী অতীতের ধারাবাহিকতা দেখতে চায় এবং বিভিন্ন বিষয়ে মতপার্থক্য এবং ভিন্নমত সহকারে আলেমরা উম্মাহ ও দ্বীনের বৃহত্তর স্বার্থে ঐক্যমত গড়ে তুলতে পারলে সোনালীে অতীত ফিরে পাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।
অভিষেক অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন মজলিসুল ওলামা বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুর রশীদ নূরী। বায়তুশ শরফের সামগ্রিক কর্মকান্ড তুলে ধরে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন আনজুমনে ইত্তেহাদের সেক্রেটারী জেনারেল ও সাবেক পুটিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ইদ্রিছ মিয়া। আল্লামা শাহসুফি আবদুল জব্বার (রাহঃ) কর্তৃক মজলিসুল ওলামা প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে বক্তব্য রাখেন তদানীন্তন সংগঠনের সক্রিয় সদস্য, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক পরিচালক মাওলানা আবুল হায়াত মুহাম্মদ তারেক। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মজলিসুল ওলামার যুগ্ম মহাসচিব পতেঙ্গা ইসলামিয়া ফাযিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আবু সালেহ মুহাম্মদ ছলিমুল্লাহ।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন কাজী মাওলানা জাফর ছাদেক।
অনুষ্ঠান শেষে মজলিসুল ওলামার নবগঠিত কেন্দ্রীয়, চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা কমিটির সদস্যদের শপথ বাক্য পাঠ করান রাহবারে বায়তুশ শরফ ও মজলিসুল ওলামা বাংলাদেশের সভাপতি আল্লামা আবদুল হাই নদভী (ম.জি.আ)।