মঙ্গলবার , ৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ২১শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

কোরআনে উল্লেখিত তামাসিলা ও আসনাম বনাম ভাস্কর্য ও মূর্তি নিয়ে বিতর্কের অবসান

প্রকাশিত হয়েছে-

ইসলামি ডেস্ক

 

আমরা সকলেই জানি যে, পবিত্র কোরআনের সুরা সাবা’র ১৩ নম্বর আয়াতে বর্ণিত ‘তামাসিলা’ শব্দের বিকৃত ব্যাখ্যা করে ইতিমধ্যে সব ধরনের ভাস্কর্য বৈধ প্রমাণের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে একটি মহল। তারা বলতে চাইছে, “তামাসিলা অর্থাৎ ভাস্কর্যের কথা কোরআনে আছে এবং কুরআনে কারীমে মূর্তি বুঝাতে আসনাম শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। সুতরাং ভাস্কর্য ও মূর্তি এক নয়।

এমতাবস্থায় সাধারণ মুসলমানের ঈমান হেফাজতের জন্য শব্দদ্বয়ের যথাযথ ব্যাখ্যা উপস্থাপনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি।
পবিত্র কুরআনে উল্লেখিত সূরা সাবা’র ১৩ নং আয়াত হচ্ছে-
يَعْمَلُونَ لَهُ مَا يَشَاءُ مِن مَّحَارِيبَ وَتَمَاثِيلَ وَجِفَانٍ كَالْجَوَابِ وَقُدُورٍ رَّاسِيَاتٍ …

“তারা তাঁর (সুলাইমান আ. এর) ইচ্ছানুযায়ী মেহরাব, প্রতিকৃতি বা ভাস্কর্য , হাউযসদৃশ বৃহদাকার পাত্র এবং চুল্লির উপর স্থাপিত বিশাল ডেগ নির্মাণ করত…।”

কতিপয় জ্ঞানপ্রতিবন্ধি এ আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে বলছেন, ভাস্কর্য হলো মানুষসহ কোন প্রাণী বা কোনো কিছুর প্রতিকৃতি যাকে মানুষ রাখে সম্মান দেখাতে বা সৌন্দর্যবর্ধন করতে, যার আরাধনা বা উপাসনা করা হয় না।

অথচ পবিত্র কোরআনে সূরা আল আম্বিয়া ৫২ নম্বর আয়াতে তামাসিলা বলতে এমন কিছু কে বোঝানো হয়েছে মানুষ যার পূজা করত। এরশাদ হয়েছে-
إِذْ قَالَ لِأَبِيهِ وَقَوْمِهِ مَا هَٰذِهِ التَّمَاثِيلُ الَّتِي أَنتُمْ لَهَا عَاكِفُونَ

“যখন তিনি তাঁর পিতা ও তার সম্প্রদায়কে বললেন, এই মূর্তিগুলো কী? যাদের তোমরা পূজারী হয়ে বসে আছো।”
উক্ত আয়াতে তামাসিলা শব্দটি মূর্তির অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

একাধিক হাদীসেও তামাসিলা শব্দটি মূর্তি বা প্রতিমা বুঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন-
عَنْ أَبِي الْهَيَّاجِ الْأَسَدِيِّ ، قَالَ : قَالَ لِي عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ : أَلَا أَبْعَثُكَ عَلَى مَا بَعَثَنِي عَلَيْهِ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ؟ أَنْ لَا تَدَعَ تِمْثَالًا إِلَّا طَمَسْتَهُ ، وَلَا قَبْرًا مُشْرِفًا إِلَّا سَوَّيْتَهُ‏.‏

আবুল হাইয়ায আল-আসাদী রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- একদা হযরত আলী রা. আমাকে বললেন, আমি কি তোমাকে এমন কাজে প্রেরণ করবো যে কাজে আমাকে রাসুলুল্লাহ সা. পাঠিয়েছিলেন? তা হলো, কোন মূর্তি দেখলে চূর্ণ-বির্চূন না করা ব্যতীত এবং কোন উঁচু কবর দেখলে তা সমতল না করে নিভৃত হবে না। -মুসলিম শরীফ-৯৬৯

ابْن عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ أَخْبَرَنِيْ أَبُوْ طَلْحَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ صَاحِبُ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَكَانَ قَدْ شَهِدَ بَدْرًا مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ قَالَ لَا تَدْخُلُ الْمَلَائِكَةُ بَيْتًا فِيْهِ كَلْبٌ وَلَا صُوْرَةٌ يُرِيْدُ التَّمَاثِيْلَ الَّتِيْ فِيْهَا الْأَرْوَاحُ

ইব্‌নু আব্বাস রা. বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ সা. -এর সঙ্গে বদ‌র যুদ্ধে যোগদানকারী সাহাবী আবূ ত্বল্‌হা রা. আমাকে জানিয়েছেন যে, রসূলুল্লাহ্‌ সা. বলেছেন, যে ঘরে কুকুর কিংবা ছবি থাকে সে ঘরে ফেরেশেতা প্রবেশ করেন না। ইব্‌নু আব্বাসের মতে ছবির অর্থ তামাসিলা বা প্রাণীর ছবি। বুখারী শরীফ (আ.প্র. ৩৭০৫, ই.ফা. ৩৭০৯)
চলবে

 

সূত্র,,,, মুফতী সাখাওয়াত হোসেন রাজি (হাফিজাহুল্লাহ)