শুক্রবার , ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ২৪শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

গন্ডামারা ট্রাজেডির পেছনে আলোচনায় লেয়াকত আলীর নাম!”যত লাশ, তত লাভ”

প্রকাশিত হয়েছে-

 

আলমগীর ইসলামাবাদী
চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি

বাঁশখালীর গন্ডামারা কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে শ্রমিক অসন্তোষ, দাবী দাওয়া নিয়ে আন্দোলন, পুলিশের গুলিতে ৫ শ্রমিক নিহত এবং অর্ধ শত শ্রমিক আহত হওয়ার ঘটনায় গন্ডামারা ইউপি চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা লেয়াকত আলীকে দায়ী করছে অনেকেই। তারা বলছে, লেয়াকত আলীর ইন্দনেই শ্রমিক আন্দোলন এবং পরবর্তিতে সংঘর্ষ ও খুনের ঘটনা ঘটেছে। যত লাশ পড়ে তত লাভবান হয় লেয়াকত আলী। লাশ নিয়ে তার রাজনীতির শেষ নেই। লাশের উপর ভর করেই তার রাজনীতি। অবশ্যই লেয়াকত আলী তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, এসব তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। শ্রমিক আন্দোলনের সাথে তার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই।

এদিকে খোদ কয়লা প্রকল্পের কো- অর্ডিনেটর মোহাম্মদ ফারুক হোসাইন অভিযোগ করেছেন, কয়লা প্রকল্পে শ্রমিক সরবরাহের কাজ লেয়াকত আলীর কাছ থেকে প্রত্যাহার করে চায়না কোম্পানীকে দেয়ায় তিনি ক্ষীপ্ত হয়েছেন। তাছাড়া গন্ডামারায় তার ইশারা ও নির্দেশের বাইরে এত বড় ঘটনা সম্ভব নয়। এদিকে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার রশিদুল হক শনিবার বিকেলে স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে গন্ডামারা ট্রাজেডির পিছনে ইন্দনদাতা ও উস্কানীদাতাদের দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, উস্কানীদাতা ও ইন্দনদাতাদের খুজে বের করা হবে। জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমানও বলেছেন, যারা সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড বাধাগ্রস্থ করতে চায়, সরকারের ভাল কাজ যাদের পছন্দ হয়না তারাই উস্কানী দিয়ে গন্ডামারায় এই নারকীয় ঘটনা ঘটিয়েছে। এখানে শুধু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে সেটাই নয়; প্রকল্পে ব্যাপক ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এতে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন জেলা প্রশাসক।

এর আগে লেয়াকত আলীর নেতৃত্বে গন্ডামারা কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়। সেই আন্দোলনে ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল পুলিশের গুলিতে ৪ জন মারা যান। পরে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারীতে মারা যায় আরো ১ জন। সে সময় লেয়াকত আলীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়। তদন্ত রিপোর্টে একমাত্র লেয়াকত আলীকে ঘটনার নেপথ্য নায়ক হিসেবে তুলে ধরা হয়। কিন্তু লেয়াকত আলী রয়ে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। এস আলম কর্তৃপক্ষ ও সরকারের সাথে সমঝোতা করে সে যাত্রায় বেঁচে যায় লেয়াকত আলী। দীর্ঘ ৫ বছর পর আবারো গন্ডামারা রক্তাক্ত হল। মারা গেল আরো ৫ জন। এনিয়ে গন্ডামারা কয়লা প্রকল্পে ১০ জন মানুষ প্রাণ হারায়।

৫ বছর আগে লেয়াকত আলী আন্দোলন গড়ে তুলে এবং প্রশাসন ও এসআলমের সাথে সমঝোতা করে বেঁচে গেলেও এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। ঘটনার কয়েক ঘন্টার মধ্যে গন্ডামারায় শত শত র্যাব পুলিশের উপস্থিতি, পুরো এলাকা আইনশৃংখলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে নেয়া বলে দেয় লেয়াকত আলীর আগের সেই আন্দোলন এখন আর হবে না। তাছাড়া জনগনও এখন আর আগের মত তার বক্তব্যে মতোয়ারা হবে না। কারণ এই লেয়াকত এক সময় বলেছিল, “১০ হাজার মানুষ মারা গেলেও গন্ডামারায় কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প করতে দেয়া হবে না”
তিনি কয়লা বিদ্যুতের কুফল নিয়ে এলাকায় জনমত তৈরি করেন।

কিন্তু অভিযোগ আছে, পরবর্তিতে এই লেয়াকত আলী মোটা অংকের টাকা এবং প্রকল্পের বিভিন্ন কাজে পরসেন্টিজের বিনিময়ে প্রকল্পের পক্ষে হয়ে যায়। কিন্তু হলে কি হবে? ঘটনা আর খুনি খুনি না হলে গন্ডামারা শান্ত থাকলে লেয়াকত আলীর যে কাজ নেই!

তাই তিনি আবারো উস্কানী দিয়ে গন্ডামারাকে অশান্ত করে তোলার চেষ্টা করেন। এতে লেয়াকত আলীর “যত লাশ, তত লাভ” লাশ পড়লে, ঘটনা ঘটলে লেয়াকত আলী লাভবান হবে। লাভবান হবে স্থানীয় আরো কিছু নেতা ও দালাল।
ফলে এলাকাবাসী ও সচেতন মহল মনে করেন, লেয়াকত আলীর উস্কানী ইন্দনেই গন্ডামারায় আবারো সংঘাত এবং খুনাখুনির ঘটনা ঘটেছে। সচেতন মহল বিষয়টি নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার ইন্দনদাতা-উস্কানীদাতাদের খুঁজে বের করতে দাবী জানিয়েছে।