শনিবার , ১লা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ১৮ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - শীতকাল || ২রা শাবান, ১৪৪৬ হিজরি

টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অনিয়ম- দুর্নীতির আখড়া

প্রকাশিত হয়েছে-

ইব্রাহীম মাহমুদঃটেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি,

কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। নিয়মনীতি ছাড়া চলছে হাসপাতালের কার্যক্রম চলছে।আউটডোর-ইনডোরের রোগীরা জানান,সকাল হতে দূরদুরান্ত থেকে সরকারি সেবা পাওয়ার উদ্দেশ্যে হাসপাতলের আউটডোরে এসে যথাসময়ে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকদের পাওয়া যায় না। দুয়েকজন আসলেও তাদের ইচ্ছা মোতাবেক চেম্বারে বসে কিছু রোগীকে সেবা দিয়ে ১২টার পরপরই চলে যায়। দুপুর ২টার আগেই স্ব-স্ব প্রাইভেট চেম্বারে বসে নগদ টাকার বিনিময়ে রোগী দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।এটাই এখন হাসপাতালের ডাক্তারদের নিত্যদিনের রুটিনে পরিণত হয়েছে।

আউটডোরে যে অবস্থা,জরুরি বিভাগ ও ইনডোরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে বলে সেবা নিতে আসা রোগিরা ক্ষোভের সাথে জানান। জরুরি বিভাগের অবস্থা আরো ভয়ানক ! কোনো মুমূর্ষ রোগি জরুরি বিভাগে গেলে সেখানে কর্তব্যরত এম বিবি এস ডাক্তার উপস্থিত থাকে না। তদস্থলে কোনো কোনো সময় উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার নতুবা নার্সরা ডাক্তারের কাজ চালিয়ে যায় বলে জানা গেছে। এদেরকে দিতে হয় মোটা অংকের টাকা।এই নার্সরা মুমূর্ষ রেগিদেরকে সেবা দেয়ার নামে জল্লাদের মতো ইনজেকশন পুশিং, স্যালাইন, সেলাই ইত্যাদি করে থাকে বলে ভুক্তভোগি রোগিরা জানান।
এমনকি রোগীদেরকে বসার ও শুবার জন্য নির্দিষ্ট স্থান থাকলেও ওকানে না বসিয়ে দাঁড়ানো অবস্থায় সেলাই পুশিং করে থাকে বলে অভিযোগ ওঠেছে।এবিষয়ে কোনো রোগির বা রোগির আত্বীয়স্বজন অভিযোগ করলে তাদেরকে গালমন্দ করে থাকে বলে রোগির স্বজনরা জানান।

সূত্রে জানায়, বদিউল আলম (বদি) ফজলুল হক এই দুই পুরুষ নার্স দীর্ঘ বছর ধরে টেকনাফ হাসপাতালে কর্মরত থাকার সুবাদে অনিয়ম ও অপরাধের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে হাসপাতাল কে। আরেক কর্মচারী এ্যাম্বুরেন্স চালক স্বপন টেকনাফ হাসপাতালে দীর্ঘ বছর চাকরি করার বিগত ২-৩ বছর আগে চাকরি থেকে অবসর নেন।এরপরেও তিনি সরকারি কোয়াটার এবং সরকারি সুযোগ সুবিধা ভোগ করে যাচ্ছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।তার বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে এ্যাম্বুলেন্স-এর মাধ্যমে মাদক পাচারসহ বিভিন্ন অনৈতিক কাজ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সেই উখিয়ায় গড়েছে বিলাস বহুল বড়ি ও কোটি টাকার সম্পদ। সেই স্বপন এখনো মাদক কারবারে জড়িত আছে বলে জানা গেছে।এই স্বপনের সম্পদের হিসেব টানলেই থলের বিড়াল বের হয়ে আসবে।

প্রাইভেট চেম্বারে বসে চিকিৎসকেরা রোগীদের কে ব্যবস্থাপত্র দেবার আগেই বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাগজ ধারিয়ে দেয় এবং নির্দিষ্ট করে ল্যাবের নাম বলে দেয় বলেও জানায় রোগিরা। টেকনাফ পৌরসভা থেকে আসা তাসমিন,নজির ও কামাল জানান,তাদের নির্দিষ্ট করে দেয়া ল্যাবে গেলে কমপক্ষে দুই হতে তিন হাজার টাকা ফি নেয়।এতে বিপদের সন্মূখিন হয় হতদরিদ্র রেগিরা।টাকার পরিমাণ এতো বেশি কেন জানতে চাইলে ল্যাবের লোকজন জানান,প্রতিটি পরীক্ষার পেছনে চিকিৎসকদের ৩০% এবং চিকিৎসকদের সহকারিদের ১০% করে দিনশেষে বুঝে দিতে হয়। অথচ প্রতিটি হাসপাতালে রোগিদের পরীক্ষা নিরীক্ষা করার জন্য সরকারি ল্যাব ও টেকনেশিয়ান রয়েছে।কিন্তু টেকনাফ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত টেকনেশিয়ান বেসরকারি ল্যাবে পার্ট টাইম কাজ করে বলে অভিযোগ রয়েছে।এছাড়াও সরকারি ভাবে বরাদ্দকৃত এক্স-রে ফ্লিম বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে।অন্যান্য সব পরীক্ষা বিনামূল্যে করার নিয়ম থাকলেও টেকনেশিয়ানরা ডায়াবেটিস ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা করে নেয় বলে ভোক্তভোগি রোগিরা জানান।ইনডোরে থাকা পুরুষ ও মহিলা রোগিরা জানান,সরকারিভারে বিনামূল্যে সকালে উন্নমানের নাস্তা,বিকালে দুবেলা ভাত দেয়ার নিয়ম থাকলেও কিন্তু দেয়া হয় নিম্মমানের নাস্তা ও খাবার ।মেয়াদ উত্তীর্ণ রুটি, বিস্কুট ও নষ্ট ডিম কোনো কোনো সময় দেয়া হয়।খাবারের মান অত্যন্ত নিম্ম ।মাঝেমধ্যে দেয়া হয় না ,অথচ প্রতিদিন বিভিনন্ন সীটে রোগি দিখিয়ে খাবারের টিকারদার ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।সাম্প্রতিক সময়ে খাবারের টিকাদারের নিয়োগ নিয়ে টেকনাফ উপজেলার প্রতাপশালীদের মধ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছিল।পরবর্তীতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে একটি গ্রুপ ওই টিকাদারি ছিনিয়ে নেয়।এদিকে সরকারিভাবে হাসপাতালের দিবারাত্রি নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ থাকলেও তারা কর্মস্থলে সঠিক সময়ে থাকে না।ফলে মাদকসেবনকারী,পাচারকারী ও বাজারজাত করণকারীরা হাসপাতালের অভ্যান্তরে আড্ডাখানয় পরিণত হয়েছে।এদের সাথে জড়িয়ে পড়ছে হাসপাতালে কর্মরত কথিপয় কর্মচারিরাও।গেল ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ইং ২০ হাজার ইয়াবাসহ টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত পিয়ন রামু উপজেলার আব্দু রহিম কে আটক করেছিল টেকনাফ থানা পুলিশ।বর্তমনে সে জেল হাজতে রয়েছে। গেল কয়েকদিন আগে ময়ূরী নামের একজন ট্রোইনারও মাদকসহ গ্রেপ্তার হয়েছে।টেকনাফ হাসপাতালে এই দুই কর্মচারী ইয়াবাসহ আটকের খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নিন্দার ঝড় ওঠে।সচেতন মহলে বলতে শুনা যায়, টেকনাফ হাসপাতাল কি রেগির সোবার প্রতিষ্ঠান না ইয়াবার করাখানা।

এবিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: টিটু চন্দ্র শীল বলেন,ইয়াবাসহ কর্মচারীদের আটকের বিষয়টি সঠিক। হাসপাতালের টয়লেট অপরিষ্কার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি টেকনাফ পৌরসভার থেকে এসে পরিস্কার করে বলে জানান। উল্লেখিত অন্যান্য বিষয়গুলো অস্বীকার করে ক্ষোবের স্বরে নিউজ করতে বলে রাগান্বিত হয়ে মোবাইল ফোন কেটে দেন ।