এইচ এম আলমগীর ইসলামাবাদী,চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি।
বিশেষ অবদান রাখছে।
বাংলাদেশের প্রাচীন কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড ইত্তেহাদের সভাপতি হলেন দেশ বরেণ্য শিক্ষবিদ চট্টগ্রাম জামেয়া দারুল মাআরিফ আল ইসলামিয়ার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক আল্লামা সুলতান যওক নদভী।
পটিয়া মাদরাসার পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ মূলক সংস্থা বাংলাদেশ তাহফিজুল কোরআন সংস্থার বর্তমান সভাপতি আল্লামা আবদুল হালিম বোখারী। সল্পসময়ে পবিত্র কোরআন হিফজ করার জন্য শিশু-কিশোরদের উৎসাহিত করার মাধ্যমে তাজবিদ তথা বিশুদ্ধ পাঠভিত্তিক হিফজ শিক্ষার সম্প্রসারণ ও পবিত্র কোরআনের সংরক্ষণের লক্ষ্যে ১৯৭৬ সালে সংস্থাটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
সারাদেশের ব্যাপকভাবে ইসলামের বাণী ছড়িয়ে দিতে ইসলামি সম্মেলন আয়োজন করার লক্ষ্যে ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ইসলামী সম্মেলন সংস্থা বাংলাদেশ।’ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ২০১৫ পর্যন্ত তিনি এই সংস্থাটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০১৬ সালে ফকিহুল মিল্লাত মুফতি আবদুর রহমানের মৃত্যুবরণের পর তিনি সভাপতির দায়িত্ব পান।
ইসলামি অর্থব্যবস্থা বর্তমান সময়ের অন্যতম চাহিদা ও দাবি। আধুনিক অর্থব্যবস্থা যথাযথভাবে অনুধাবন করে ইসলামি অর্থব্যবস্থার মাধ্যমে তার সমাধান পেশ করা একজন বিজ্ঞ মুফতির অন্যতম দায়িত্ব। এই গুরু দায়িত্বও তিনি পালন করে যাচ্ছেন। বর্তমানে তিনি শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের শরিয়াহ সুপারভাইজারী কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার নির্দেশনায়, পটিয়া মাদরাসার প্রধান মুফতি হিসেবে মুফতি শাসসুদ্দীন জিয়াও এক্ষেত্রে বিশাল অবদান রাখছেন।
শুধু শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক ও ধর্মীয় আলোচক হিসেবে নয়, আধ্যাত্মিক সাধক হিসেবেও তিনি সফল। আল্লামা আবদুল হালীম বোখারী কুতবে জামান আল্লামা মুফতি আজিজুল হক রহমাতুল্লাহি আলাইহির বিশিষ্ট খলিফা জামিয়া ইসলামিয়া দারুস সুন্নাহ হ্নীলার সাবেক শায়খুল হাদিস আল্লামা ইসহাক (ছদর সাহেব হুজুর নামে চট্টগ্রাম অঞ্চলে সমধিক পরিচি) রহমাতুল্লাহি আলাইহির হাতে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন। আল্লামা আবদুল হালীম বোখারীর অসংখ্য ভক্ত ও মুরিদ রয়েছে। তাদের কয়েকজনকে তিনি খেলাফতও দিয়েছেন।
লেখক হিসেবে তিনি অবদান রেখেছেন। তার লিখিত গ্রন্থাবলীর অন্যতম হলো- তাসহিলুত তাহাভি, তাসহিলুল উসূল (পাঠ্যভূক্ত)ও তাসহিলুত তিরমিজি।
চট্টগ্রামের গণ্ডি পেরিয়ে জাতীয় পর্যায়েও তার বিশাল ভূমিকা রয়েছে। বিভিন্ন সেমিনার-সিম্পোয়ামে অংশগ্রহণসহ নানা কাজে তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন। যেকোনো আন্দোলন-সংগ্রাম কিংবা জাতীয় ইস্যুতে তার সরব উপস্থিতি দেখা যায়। কওমি মাদরাসার সনদের সরকারি স্বীকৃতি আন্দোলনের পুরোভাগে ছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্সের স্বীকৃত প্রদানের নিমিত্তে আল হাইআতুল উলয়া গঠিত হলে তিনি এর স্থায়ী কমিটির সদস্য মনোনীত হন।
চার ছেলে ও তিন মেয়ের বাবা আল্লামা বোখারী। চার ছেলে ও মেয়ের জামাইদের সবাই আলেম। নিজ কর্মক্ষেত্রে তারা সফলতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন।
বলা হয়, জ্ঞানীর কদর একমাত্র জ্ঞানীরাই জ্ঞানের কদর করেন। এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আল্লামা আবদুল হালিম বোখারী। এ কারণে আমরা দেখি, পটিয়া মাদরাসার বহুমুখী কর্মকাণ্ডে জ্ঞানসাধকদের ভিড়। বিশেষ করে আজকের লেখায় মুফতি শাসসুদ্দীন জিয়া, ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন ও মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামযার প্রসঙ্গ এসেছে। এ ছাড়া জামিয়ার শিক্ষা কার্যক্রমে জড়িয়ে আছেন বিজ্ঞ ও যোগ্য উস্তাদগণ। পটিয়াকে ঘিরে জ্ঞানীদের এই মিলনমেলা সাজানোর কারিগর আল্লামা আবদুল হালিম বোখারী।
যাদের জ্ঞানের সমারোহে এই প্রজন্ম ও উম্মাহ লাভবান হচ্ছেন। তাদের জ্ঞানের দীপ্তিতে আলোকিত হচ্ছে এই সমাজ ও দেশ। এটাই আল্লামা আবদুল হালিম বোখারীর ব্যতিক্রমী কর্মপন্থা ও মুন্সিয়ানা। যুগচাহিদার প্রেক্ষিতে নেওয়া তার সিদ্ধান্তগুলো প্রমাণ করে, জ্ঞানীদের প্রতি সম্মান ও উৎসাহ দিতে তিনি কুণ্ঠিত নন।
লেখার শুরুতে বলেছিলাম তার একান্ত সান্নিধ্য প্রসঙ্গ নিয়ে। তখন দেখেছি, মতের মিল না হলে ভিন্নমত পোষণকারীর প্রতি তার শ্রদ্ধায় কমতি নেই। সবার সঙ্গে, সব বিষয়ে মতের মিল হতে হবে এটা প্রত্যাশিতও নয়। আল্লামা বোখারীকে দেখেছি, ভিন্নমতের মতের হলেও জ্ঞানী-গুণীকে সমাদর করতে কসুর করেন না। এটা তার অনন্য গুণ। এখনকার যুগের এমন গুণের মানুষ পাওয়া বিরল।
তিনি একজন সাহসী কর্মবীর। সুদূরপ্রসারী চিন্তা ও গভীর জ্ঞানের কারণে তিনি পরিণত হয়েছে আলেমদের অভিভাবকে। আল্লামা আবদুল হালিম বোখারীর এই গুণ ও জ্ঞানসাধনার আলো আরও ছড়াক এবং তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক। আমিন।