আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ভারতে কৃষি আন্দোলন ইস্যুতে ক্রমশ উত্তেজনা বাড়ছে দিল্লির সীমানায়। উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজনীতি। দিল্লি ঢোকার পাঁচটি পথ বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন আন্দোলরত কৃষকরা। অবরুদ্ধ করা হতে পারে মহসড়কও।
মাত্র দু’দিনের আন্দোলন কর্মসূচি। তবে সবটাই নির্ভর করছে, সরকার তাদের দাবি মেনে নেবে কি না। কেন্দ্র মাথা নত করবে কি? যদি না করে তাহলে এই অবস্থান চলতে পারে ছ’মাসও। সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন আন্দোলরত কৃষকরা। আর তাই কপালের ভাঁজটা আরও দীর্ঘ হচ্ছে সরকারের।
সিঁদুরের মাঝে মেঘ দেখছে তারা… শাহিনবাগের। সিএএ-বিরোধী অবস্থান-বিক্ষোভ যেকোনো জায়গায় গিয়ে ঠেকতে পারে, তা স্পষ্টভাবেই দেখিয়ে দিয়েছে শাহিনবাগ। তাত আবার সের এর উপর সোয়া সের দিয়ে চাপ বাড়িয়েছেন রাজস্থানের এমপি তথা এনডিএ শরিক রাষ্ট্রীয় লোকতান্ত্রিক পার্টির সদস্য হনুমান বেনিওয়াল।
কীভাবে সামাল দেয়া যেতে পারে এই আন্দোলন বিক্ষোভ? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে কালঘাম ছুটছে কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারের। আন্দোলনকারীদের আলোচনা বৈঠকে বসার জন্য আহ্বান জানাচ্ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও।
এরই মধ্যে আজ, মঙ্গলবার দুপুর তিনটায় কৃষক সংগঠনের প্রতিনিধিদের আলোচনায় বসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমার। এর আগে ওই বৈঠক হওয়ার কথা ছিল ৩ রা ডিসেম্বর।
কৃষি আইন ইস্যু নিয়েই বিজেপি সরকারের সাথে দীর্ঘ সময়ের শরিকি সম্পর্ক ছেদ করেছে শিরোমণি অকালি দল। এবার রাষ্ট্রীয় লোকতান্ত্রিক পার্টির বেনিওয়ালের গলাতেও যেন হুঁশিয়ারির সুর। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক।
অবশেষে আসরে নামতে হয়েছে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকেও। রোববার ‘মন কি বাত’-এ তিন কৃষি আইন নিয়ে সাফাই গাওয়ার পর সোমবারও ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টাফিকির চালিয়েছেন তিনি। বারাণসী-প্রয়াগরাজ জাতীয় সড়ক ১৯-এর ছয় লেনে প্রশস্ত করার প্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে গিয়ে বক্তব্যদানকালে বেশিরভাগ সময়ই খরচ করেছেন তিনি নতুন এই কৃষি আইন নিয়ে। এত প্রচেষ্টার উদ্দেশ্য একটাই, এক ঢিলে দুই পাখি মারতে হবে—উন্নয়নের ঢাক পেটানো এবং বিরোধীদের আক্রমণ। জাতীয় কংগ্রেস ও তৃণমূলকেই যেন টার্গেট করলেন তিনি এই কৃষক-বিরোধী তকমায়।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘এত দিন কৃষকদের নামে শুধু প্রকল্প ঘোষণা হয়েছে, এমএসপি (ন্যূনতম সহায়ক মূল্য) নিয়ে ছলনা করা হয়েছে। কৃষি ঋণ মাফ করার কথা বলেও ছলচাতুরি করা হয়েছে। আমরা সেটা করিনি। সার নিয়ে যে কালোবাজারি ছিল তা বন্ধ করেছি। একইভাবে খাদ্যশস্য সংগ্রহও বহুগুণ বেড়েছে। এমএসপি ব্যবস্থা অটুট আছে ভবিষ্যতেও থাকবে।
সরাসরি নাম উচ্চারণ না করে কংগ্রেসের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এত দিন যারা কৃষকদের জন্য নানা প্রকল্প ঘোষণা করে এক টাকার মধ্যে মাত্র ১৫ পয়সা দিত, তারাই আজ কৃষকদের বিভ্রান্ত করছে, এটা করা ছাড়াতো আর গতি নেই। কৃষকরাও দীর্ঘসময় ধরে ঠকেছেন। তাই আশঙ্কায় ভুগছেন। কিন্তু বিজেপি সরকারের আমলে তা হবে না।’
প্রধানমন্ত্রী মোদি আরো বলেন, ‘দশকের পর দশক ধরে কৃষকদের নিয়ে নানা ছলনা করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের উদ্দেশ্য তা নয়, আমাদের উদ্দেশ্য গঙ্গাজলের মতো পবিত্র।’
তবে প্রধানমন্ত্রী মোদির ওই কটাক্ষের পাল্টা জবাব দিয়েছে দুই বিরোধী দলও। ক্ষুদ্র এবং প্রান্তিক চাষিদের ঋণ মওকুফ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন কংগ্রেসের লোকসভার নেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী। পাশাপাশি কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়েছেন রাহুল ও প্রিয়াঙ্কাও। তারা প্রশ্ন তুলছেন, নতুন এই কৃষি আইনে আসলে কাদের পাশে মোদি সরকার?, গরিব কৃষকদের? নাকি পুঁজিবাদী বন্ধু ব্যবসায়ীদের?
ছেড়ে কথা বলেননি তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়ানও।
প্রধানমন্ত্রীর কটাক্ষে তার জবাব, শত চেষ্টা করলেও তৃণমূলকে কৃষক-বিরোধী প্রমাণ করতে পারবেন না। সিঙ্গুর আন্দোলন থেকে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় এসে কৃষকদের উপার্জন তিনগুণ করেছেন মমতা ব্যানার্জি। তিনি প্রমাণ করে দিয়েছেন, তার কর্মসূচিতে কোনো দ্ব্যর্থবোধকতা নেই।