Saifullah Al Monir
সরল বাংলায় বলতে গেলে নারায়ণগঞ্জের বায়তুস সালাত মসজিদে বিস্ফোরণে মুছুল্লীদের মৃত্যুর ঘটনা একটি হত্যাকান্ড। তিতাস কর্তৃপক্ষ খুনী। তাদেরকে তাগাদা দেয়া সত্ত্বেও ঘুষ না পেয়ে গ্যাস লাইন মেরামত করে নাই। সুতরাং এ নৃশংস মৃত্যুগুলোর জন্য তারা দায়ী।
তিতাসের বাপ চাচারা দায় এড়াতে বলছিলো, মসজিদটি অবৈধ স্থাপণা। এখন তো প্রমাণিত হলো, মসজিদ অবৈধ না।তোমরা সব অবৈধ, এমনকি তোমরা এখন হন্তারক।
তদন্ত কমিটি খতিয়ে দেখেছে, ওয়াকফকৃত জমিতে মসজিদখানা গড়ে উঠেছে। সেখানের গ্যাস সঞ্চালন লাইনে লিকেজ থাকাটাই তো অবৈধ।
হাইকোর্টে একটা রীট হয়েছে, তিতাসকে নিহতদের মাথাপিছু পঞ্চাশ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার আদেশ দিতে। হাইকোর্টে তাৎক্ষণিক আদেশে মূত্যু বরণকারী মাথা পিছু পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
সরকারের মাইন্ডসেট বড় অদ্ভুত! নিরীহ মুসুল্লীদের কফিন দেখে তাদের মন গলেনি। তাঁদের মৃত্যু অবৈধ? তাদেরকে খামাখা ক্ষতিপূরণ দিবে কেন? তাই ঐ আদেশের বিরুদ্ধে আপীল করতে যাচ্ছে। হায়রে বিবেক! দেশটা আসলে বিবেকহীন অমানুষে ভরে গেছে।
তাঁরা যদি নিরীহ মুসুল্লী না হয়ে সাধারণ জনগন হতো, তাহলে সরকার হয়তো গুরুত্ব দিতো। ছায়ানট বা সিনেমা হলে বিষ্ফারণ হলে তারা হয়তো জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা দিতো। আর মন্ত্রীরা ছাগলের মতো চাবায়ে চাবায়ে বলতো না, মসজিদটি অবৈধ!
প্রমাণিত হলো, মসজিদটি বৈধ। সুতরাং ক্ষতিপূরণের বেলায় আপত্তি কেন?
কয়েক বছর আগে নিমতলীতে পুড়ে হতভাগ্য নিহত মানুষদের মেয়েদেরকে এই প্রধাণমন্ত্রী নিজের মেয়ের মর্যাদা দিয়ে লেখাপড়া করিয়েছেন, ধুমধাম বিয়েও দিয়েছেন। সে ঘটনায় মিডিয়াও হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল। এখানে উপেক্ষা করা হচ্ছে কেন?
আসলে মসজিদ, মুছুল্লী, হুজুর, ইমাম, মুয়াজ্জিন এসব শব্দে তাদের এলার্জী হয়! এ শব্দগুলো বাংলা নয়। বাংলা শব্দে তাদের অদ্ভুদ রকমের মায়া। বাংলা নাম খুব পছন্দের। বাংলা নামধারীরাই এখন বাংলাদেশের হর্তাকর্তা।
তবে বুঝা গেলো, জায়নামাজ শব্দে প্রধানমন্ত্রীর সমস্যা নাই। গতকাল বৈধ! পার্লামেন্টে বলেছেন- ঘুম থেকে উঠে তিনি প্রথমেই জায়নামাজ খুঁজেন। মাশাআল্লাহ। তিনি নামাজ পড়েন, এটা আমরা জানি। তবে সেটা প্রমাণ করতে জায়নামাজ খোঁজার কথা না বললেও পারতেন। আমরা বিশ্বাস করে আসছি, তিনি একজন নামাজী। ডেইলি ছয় ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। বাড়তি তাহাজ্জুদও পড়েন। দুষ্টুরা তাহাজ্জুদী বেগম বলেন।
কিন্তু তাঁর নামাজীদের প্রতি মহব্বত পয়দা হয় নাই। এ পর্যন্ত ২৮ জন মুছুল্লী, যারা নামাজরত অবস্থায় আগুনে দগ্ধ হয়ে শাহাদত বরণ গেছেন, অথচ একটি বার সরকারের তরফে শোক নাই, দুঃখ নাই। ক্ষতিপূরণের ঘোষনা নাই।
হাইকোর্ট ক্ষতিপূরণের আদেশ দিয়েছে, তাতেও আপিল করে বাগড়া দিতে যাচ্ছে সরকার। সরকারী তহবিলের অর্থ কারো বাবার সম্পত্তি নয়। সরকারী তহবিলের মালিক এ দেশের জনগন। যারা আগুনে পুড়ে মারা গেছেন, তারাও এ অর্থের মালিক। সুতরাং তারা কেন প্রাপ্য হবেন না? এটা কোন করুণা নয়, এটা অধিকার।
সরকারের ইমামরা বড়ই ফাযিল। একচোখ দিয়ে দেখে। নর্তকী, নায়ক-নায়িকা, গায়ক-গায়িকারা অসুস্থ হলেই খাজাঞ্চি খুলে দেয়া হয়, চিকিৎসা সুবিধা দিতে এয়ার এম্বুলেন্স উড়ায়, তাতে অবৈধ কিছু খুঁজে পায়না। অবৈধতা খুঁজে পায়, ভাল মানুষদের বেলায়। নামাজীরা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ। হয়তো আখেরাতেও। অথচ তাঁদের বেলায় চরম উন্নাসিকতা।
ইসলামী যুব আন্দোলন রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করেছে- তিতাসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। তারা কর্তব্যে অবহেলা করেছে। তাঁরা খুনী। তাদের বিচার ও ক্ষতিপূরণের দাবীতে আন্দোলন জারী আছে। আগামী শুক্রবার কেন্দ্রীয় ভাবে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি আছে।
নারায়ণগঞ্জে যুব আন্দোলনের তীব্র আন্দোলনের কারণে কর্তৃপক্ষ তিতাসের আটজনকে সাময়িক বরখাস্ত করতে বাধ্য হয় । যদিও এটা আইওয়াশ।
সরকার যদি আইনের রক্ষক হতো, তাহলে এতক্ষণে ওদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা এনে গ্রেপ্তার করতো। এটাই জনগনের দাবী ছিলো।
জনগনের দাবীকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা এ সরকারের মজ্জাগত একটি বিষয়। একটি সুস্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে নতুনরা ম্যান্ডেট নিয়ে নতুন করে সরকার গঠন করবে। সেটাই তো সাংবিধানিক দর্শন। সেটাকে ধর্ষন করেছে প্রশাসন ও দলের পান্ডারা। রাতের আমলে চুরি করে জেতা এমপিদের বদৌলতে তারা এখন মন্ত্রী, প্রধাণমন্ত্রী। এবং তাঁদেরই মুখে বৈধ অবৈধের কথা জনগনকে শুনতে হচ্ছে। এটাই এখানকার জনগনের দূর্ভাগ্য। এর চেয়ে নির্মম তামাশা আর হবে পারে না।
আসলে এ দেশের সরকার জনগণের দাবীকে পেশাবের ফেনার মতো মনে করে, যা একটু পরই উবে যায়।